প্রথম মাস ভালোই গেলো, বললেন ডাকসু নেতারা
কামরুল হাসান : দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবার সক্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভোটে নির্বাচিত ছাত্র নেতা ও ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত ডাকসু ভবন।
নির্বাচনের এক মাসে যেমন কাটলো ডাকসু, প্রশ্নের জবাবে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ২৮ বছর পর যেহেতু নির্বাচনটি হলো তাই সব গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। তবুও প্রথম মাসেই আমরা সফল। গত এক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু সফলতা অর্জন করেছি। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ২০০টির মতো রিক্সাকে নির্ধারিত পোষাক ও ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও মেয়েদের হল রাত ৯টার পরিবর্তে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা ও হলগুলোতে খাবারের মান পরিবর্তন করেছি। জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছি। হলগুলো থেকে বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করা হচ্ছে।
ভিপি আরো জানান, এই কাজগুলো করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ হলের দখলদারিত্ব থাকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতে। হলে অছাত্র রাখা, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নেয়া, ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতিতে তাদের দৌরাত্ম্য। তাদের জন্যই এ কাজগুলো করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে যেহেতু আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছি তাই আমাদের যতো কষ্টই হোক আমরা কাজগুলো করবো।
ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অযৌক্তিক বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করতে সক্ষম হয়েছি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোনো বীমা ছিলো না, নির্বাচিত হয়ে সকল ছাত্রছাত্রীদের বীমার আওতায় এনেছি। ইতিমধ্যে অনাবাসিক ছাত্রছাত্রীদের পরিবহনের জন্য বাসগুলোর ট্রিপ বাড়িয়েছি। হলগুলো থেকে অছাত্রদের বের করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে প্রত্যেকটি হলে নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ঢাবির কোনো হলে কোনো অছাত্র থাকবে না।
সাদ্দাম আরো বলেন, ৪৩ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য আবাসন আছে ১৮ হাজারের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পুরোপুরি আবাসিক করার জন্য নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের জন্য হল বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ডাকসুর সমন্বয়ে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে যে মেট্রোরেল যাওয়ার কথা ছিলো সেটা বন্ধ করার জন্য কাজ করছি, কেননা এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। আমাদের যা কাজ হবে, তার সবটাই হবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ছাত্রছাত্রীদের তথ্য একটি মোবাইল এপ্লিকেশনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি, যা সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮-১০টি স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রি ইন্টারনেট স্থাপনের ব্যবস্থা করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এটি হয়ে গেলে ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেটের সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে। এ ব্যাপারে ‘আমরা টেকনোলজি’ আমাদের সহায়তা করছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিষয়ে ওয়ার্কসপ ও সেমিনারের জন্য কাজ করছি। আমার ইশতেহারে যা কথা দিয়েছিলাম তা এই মেয়াদে পূর্ণ করে যেতে চাই।
দীর্ঘদিন পর হলেও অধিকার আদায়ের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় অর্ধলক্ষ ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের সংসদ নির্বাচন যেনো আর বন্ধ না হয় তারও দাবি জানান সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান