৩ বছর ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পথচারীদের জন্য বিনামূল্যে পানি
আসিফ হাসান কাজল : রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ২২/১ নম্বর বহুতল ভবনের সামনে সকাল থেকেই দেখতে পাওয়া যায় একটি নীল রঙের পানির ট্যাঙ্ক। পানিভর্তি ট্যাঙ্কের সামনে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছেন দুই পথচারী। রিকশাচালক থেকে শুরু করে তৃষ্ণার্ত পথচারী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ভীড় জমায় পানি পান করতে। গফুর নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘এখানে পানি খাইতে টাকা লাগে না, যিনি আমাদের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন তার জন্য আমি মন ভরে দুয়া করি।’
এভাবেই গত ৩ বছর যাবত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে পথচারীদের পানির তৃষ্ণা নিবারণ করে আসছেন সিলেটের মেয়ে নাজমিন সুলতানা। ২২/১ নম্বর বাসায় ৩ তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাসকারী নাজমিন সুলতানা এই উদ্যোগের ব্যাপারে প্রতিবেদককে জানান, আমার নানা বলতেন ক্ষুধার্তকে খাবার দাও ও তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাও। কথাটি আমার কাছে মনে হয়েছিল একটি ম্যাসেজ বা বার্তা। নানাজান আজ বেঁচে নেই কিন্তু তিনার কথাটি আমার আজও মনে পড়ে। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই পথচারীদের জন্য তার এই উদ্যোগ।
আব্দুল সোবহান (৩৫) নামের এক রিকশাচালক জানান, নিউমার্কেট এলাকা থেকে ভাত খেতে তিনি প্রতিদিন এখানে আসেন। তিনি বলেন, এই রাস্তায় গাছপালা বেশী ও বিনামূল্যে পানি পান করার ব্যবস্থা থাকায় এখানে এসেই দুপুরের খাবার খেতে ভাল লাগে তার ।
বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী আব্দুস সালাম বলেন , প্রতিদিন ৫০-১০০ জন মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে আসেন পানি পানের জন্য। গরম বেশী পড়াতে গতকাল সারাদিনে ৪ বার ট্যাংকিতে পানি ভরেছি। এমন উদ্যোগে স্থানীয়রা জানান, ঢাকার যেসব নাগরিকের কাছে এই শহর শুধুই ইট-কাঠের তৈরি, এই নগরীর যেসব মানুষ এখনো ভাবে সবাই সবার পথে ছুটে চলেছে কিন্তু কেউ কারও নয়। এই ধরনের মানবিক গল্প তাদের জন্য একটি শিক্ষা।
সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এমন ঘটনায় বলেন, এমন ঘটনা সত্যিই প্রশংসনীয়। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে ও মানবিক উন্নয়নে সকল সামর্থ্যবানদের এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।