ড্রেজিং হবে ৭০০ নদী ও ৩৭ হাজার কিমি ক্যানেল, পুকুর দিঘি হাওর ১৩ হাজার হেক্টর নদ-নদী ও হাওরের নাব্য ফেরাতে সাড়ে ১৯ লাখ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা
তরিকুল সুমন : নদীর দখল-দূষণমুক্তসহ নাব্য ফেরাতে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া চ‚ড়ান্ত করছে সরকার। এ খসড়া মাস্টার প্লান অনুযায়ী দেশের নদনদী হাওর এবং পুকুর দিঘি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাজ স্থানীয় সরকার, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করবে। ৭০০ নদীর মধ্যে ১৭৮টি নৌমন্ত্রণালয়, ৩১৩ পানি সম্পদ এবং ২০৯টি নদীসহ হাওর এবং ক্যানেলের ড্রেজিং করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫ বছরের মেয়াদে ১৯৬টি ক্যানেল বা ৮১২৫ কিলোমিটার এলাকা খনন এবং ৫৫২১টি পুকুর (৩৮২৪ হেক্টর) খনন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে ১০ বছরের পরিকল্পনায় ৪৫৭৫টি ক্যানেল বা ১৮ হাজার ৯৫৮ কিমি এবং পুকুর ডোবা, দিঘি এবং হাওর মিলে ১২৮৮২টি বা ৮৯২৩ হেক্টর খনন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ জন্য ৫ ও ১০ বছরের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ১৭৮টি নদীর ড্রেজিং করা হবে। আগামী ৫ বছরে ৯৫টি নদীর ৪ হাজার ৪৪৩ কিমি খননে ব্যয় হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। অপরদিকে ১০ বছরে ৮৩টি নদী ৪ হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ লাখ ৮১৫ কোটি টাকা।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫ বছরের পরিকল্পনায় দেশের ৬৪টি নদী বা ১৮৬০ কিমি ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকায় খনন করবে। পরবর্তী ১০ বছরের পরিকল্পনায় ২৪৯টি নদীর ৬ হাজার ৭৭৯ কিমি ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৮ কোটি টাকায় খননের পরিকল্পনা রয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি টাস্কফোর্স এটি চূড়ান্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে আগামী ৫, ১০ ও ১৫ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) বাস্তবায়নের জন্য ওয়ার্কিং গ্রæপ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুমোদিত খসড়া মাস্টার প্ল্যানটি উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে তিনি অনেক আন্তরিক, বিষয়টাকে তিনি অনেক গুরুত্ব দেন, সেই হিসেবে এ বিষয়ে তার অনেক তথ্য জানা আছে। যদি কোথাও ইনপুট দেয়া দরকার মনে করেন, সংযোজন করা দরকার মনে করেন, তিনি সেটা করবেন।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন শেষে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নৌপথের গভীরতা ও দৈর্ঘ বাড়বে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আরও গতিশীল হবে। শিল্প-কারখানার পণ্য পরিবহন খরচ কমে আসবে। কৃষিকাজের সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে মাছের উৎপাদনও।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের নদীগুলোর দৈর্ঘ ২৪ হাজার কিলোমিটার। সারা বছর ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার নৌপথে যান চলাচলের উপযোগী থাকে। বর্ষা মৌসুমে নৌপথ বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটারে। নাব্য সংকটে বাকি পথে যান চলতে পারে না।
মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বহমান ৪০৫টি নদীসহ ৭০০ নদীর মধ্যে তিনটি মিয়ানমার ও ৫৪টি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোতে প্রতি বছর ২ বিলিয়ন ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদীর তলদেশে জমে নাব্য সংকট তৈরি করছে। মহাপরিকল্পনার আওতায় তিন নদী যমুনা, পদ্মা ও মেঘনাসহ, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮ হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে। নদীগুলোতে করা হবে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান