সরকারের প্রথম ১০০ দিন উদ্যোগ ও উচ্ছ¡াসহীন বলে দাবি সিপিডি’র
স্বপ্না চক্রবর্তী : সরকারের প্রথম ১০০ দিনকে উদ্যোগহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ¡াসহীন বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। একইসঙ্গে এই ১০০ দিনকে উদ্যমহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আশা করেছিলাম সরকারের প্রথম ১০০ দিনে বড় কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নতুনভাবে কোনো উদ্যোগ নিতে আমরা দেখলাম না। বরং এই ১০০ দিনে একটি মিশ্র ইঙ্গিত লক্ষ্য করা গেছে। সুদের হার ছাড় দেয়াসহ নানান ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগ বাড়বে না। মনে হয় যেন কোথাও সরকারকে যেন একটি গোষ্ঠি করায়ত্ব করে নীতি নির্ধারণ করছে।
বর্তমানে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ সূচকই নি¤œমুখী। বিশেষ করে বৈদেশিক লেনদেনে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের সোনার সংসারে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের কিছু ভালো উদ্যোগ রয়েছে। এই ভালো উদ্যোগগুলোর মধ্যে আছে, বিদেশি কর্মজীবীদের বিষয়ে জরিপ চালিয়ে করের আওতায় আনার উদ্যোগ, মানি লন্ডারিং বিধিমালা জারি করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনকে করের আওতায় আনা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব করা আট দশমিক ১৩ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিকে ঈর্ষণীয় বলছে সিপিডি। উৎপাদন খাতের ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই জিডিপির প্রবৃদ্ধি চালিকাশক্তি। তবে সিপিডি এই প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। সিপিডির মতে, এই হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। অর্থনীতির সূচকগুলোর সঙ্গে এর মিল নেই। জিডিপির হিসাব আরও গভীরে গিয়ে করা উচিত। তা না হলে নীতিনির্ধারণে সমস্যা হবে।
এসময় তিনি বলেন, উৎপাদন খাত নির্ভর প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিবিএসের হিসাব, চামড়া খাতে প্রথম প্রান্তিকে সাড়ে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার গত ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ। কিন্তু গতবার একই সময়ে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। সিপিডির মতে, বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মানে হলো, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ভূমিকা দেখিনি। আবার কর আহরণের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নেই। ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহ বেশি হয়নি। মূলধনি পণ্যের আমদানিও বেশি দেখা যায়নি। ব্যাংক খাতেও চাঞ্চল্য নেই। যেহেতু বিনিয়োগ বেশি হয়নি, তাই উৎপাদনশীলতা বেশি দেখাতে হবে। শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। গত কয়েক বছরে কি এমন প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে, যাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা এতো বাড়লো? আবার উৎপাদনশীলতা বাড়লে শ্রমিকের আয় বৃদ্ধি হওয়ার কথা। কিন্তু সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে এর প্রতিফলন নেই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কতোটা কর্মসংস্থান হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই প্রবৃদ্ধির হিসাবটি উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হচ্ছে না।
নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শাসক দলের রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বাস্তবায়নের মধ্যে পার্থক্য আছে। শাসক দল বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে তা দেখছি না। রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি হলো পরিবর্তন, দিন বদল। কিন্তু তা আটকে রাখছে রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে থাকা সুবিধাভোগীরা। আওয়ামী লীগের দেয়া নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে। তা না হলে এই ইশতেহার কাল্পনিক দলিল হিসেবে ইতিহাস বিচার করবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান