সোহেল রহমান : ‘মন্দ’ শ্রেণির খেলাপি ঋণ বা যেসব ‘কু-ঋণ’ ব্যাংক আদায় করতে পারছে না, সেগুলো আদায়ে সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’-কে দায়িত্ব দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ‘সিকিউরিজেশন অব নন-পারফরমিং লোন’ নামে একটি আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই আইনের বলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় নিয়োগকৃত কোম্পানি বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ঋণ খেলাপির প্রতিষ্ঠান দখলে নিতে পারবে। আর কু-ঋণ আদায়ে সফল হলে আদায়কৃত অর্থের ২০ বা ৩০ এমনকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দেয়া হতে পারে নিয়োগকৃত ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’-কে।
প্রস্তাবিত ‘সিকিউরিজেশন অব নন পারফরমিং লোন’ আইনে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোম্পানি যদি মনে করে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে পরিবর্তন করা হলে এটি আবার সচল হবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তাহলে কোম্পানি সেটা করতে পারবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা দেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, খেলাপি ঋণ আদায়ে বিভিন্ন দেশে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উদাহরণ পর্যালোচনা করা হয়েছে। খেলাপিঋণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংক যেসব খেলাপিঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলো ওই কোম্পানির একাউন্টে ট্রান্সফার করা হবে। এরপর ট্রান্সফার করা ওইসব খেলাপিঋণ আদায়ে উদ্যোগ নেবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। সরকারি বা বেসরকারি উভয় খাতের কোম্পানি-ই খেলাপিঋণ আদায়ে কাজ করতে পারবে। তবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটিকে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত হতে হবে।
প্রসঙ্গত গত ১৪ মার্চ এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যেসব খেলাপি ঋণ স্বাভাবিকভাবে আদায় করা যাবে না, সেগুলো আদায় করার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এ কোম্পানি কোনো শক্তি খাটিয়ে নয়, নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকেই ঋণ আদায় করবে। খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বেসরকারিভাবে পরিচালনা করা হবে। খেলাপিঋণ আদায়ের জন্য আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় পক্ষের উদ্যোগে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়। মন্দ শ্রেণির খেলাপিঋণ আদায়ে ২০০১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত একাধিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘এজেন্ট’ বা ‘রিসিভার’ নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। শুরুর দিকে এ ধরনের উদ্যোগে কিছু সফলতা আসলেও পরবর্তীতে নানা কারণে এটি সফল হয়নি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান