দরিদ্র দেশগুলো হচ্ছে আরও দরিদ্র,বাড়ছে বৈষম্য
আবুল বাশার
জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের সব প্রান্তের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেই নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। ফলে দরিদ্র দেশগুলো দরিদ্রতর হচ্ছে ও বৈশ্বিক অসমতা বাড়ছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা গত ৫০ বছরে বিভিন্ন দেশের ওপর কেমন প্রভাব রেখেছে, সে বিষয়ে স্ট্যানফোর্ডের দুই গবেষকের গবেষণাটি সোমবার ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে দেশগুলোর জলবায়ু অধিক উষ্ণ, সেসব দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তত বেশি। ২০১০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ৩১ শতাংশ কম হতো না যদি পূর্ববর্তী অর্ধশতকে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি না ঘটত। গবেষণায় দাবি করা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আফ্রিকার দেশ শাদের ব্যক্তিপ্রতি অর্থনৈতিক কার্যক্রম ৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ভেনিজুয়েলা ও নাইজেরিয়ায় ব্যক্তিপ্রতি অর্থনৈতিক কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৩২ ও ২৯ শতাংশ।
জলবায়ু পরিবর্তন ও ব্যবসা: গবেষণায় বলা হচ্ছে, মোটা দাগে গত অর্ধশতকে ওই দেশগুলোর বেশির ভাগই তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেশ শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে দেশগুলোর মধ্যে অসাম্য কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা না বাড়লে উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিত হতো। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির উডস ইনস্টিটিউট ফর দ্য এনভায়রনমেন্টের সিনিয়র ফেলো নোয়া ডিফেনবাউ ও স্ট্যানফোর্ডেরই অন্য এক গবেষক মার্শাল বার্ক যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন। তাদের গবেষণায় অবশ্য এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি কীভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
ধনী দেশগুলো কী উপকৃত হতে পারে?- ঐতিহাসিকভাবে ধনী দেশগুলো সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে।
শিল্পায়ন ও ব্যক্তিগত ভোগব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা আরো বাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যদি কার্যকর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়। বেশির ভাগ ধনী দেশ পৃথিবীর উত্তরাংশে অবস্থিত, যা ঠান্ডা প্রধান অঞ্চল। উষ্ণতা বৃদ্ধিতে তারা বরং কিছুটা উপকৃত হতে পারে। কারণ এতে তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ‘আদর্শ উষ্ণতায়’ পৌঁছতে পারে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অসমতা আরো বাড়বে।
দরিদ্র দেশগুলো একা ভুক্তভোগী নয়: গবেষক ডিফেনবাউ স্বীকার করেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ধনী দেশগুলো যে উপকৃত হয়েছে, সে বিষয়টি একেবারে সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা না গেলেও দরিদ্র দেশগুলো যে দরিদ্রতর হয়েছে সেটি সুস্পষ্ট।
বিভিন্ন দেশ ও নানা আয়ের মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন কেমন ভূমিকা রাখছে, তা পূর্ববর্তী বেশকিছু গবেষণায়ও উঠে এসেছে। সব দেশের ধনী ব্যক্তিরা যে উষ্ণ বিশ্বে নিজেদের ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে সক্ষম, তা স্পষ্ট।
ধনীরা ইচ্ছে করলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের সুবিধা নিয়ে ঘরে বসেই কাজ সেরে ফেলতে পারেন বা ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা থেকে আবাসস্থল পাল্টাতে পারেন। গত বছর প্রকাশিত এক গবেষণায় হিসিয়াং ও তার সহলেখকরা দাবি করেন। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক জলবায়ু উদ্যোগের পরিচালক ডেভিড ওয়াসকো বলেন, এ রকম ভাবনার কোনো সুযোগ নেই যে, বিশ্বের অন্য প্রান্তে কিছু ঘটলে তা ধনী দেশগুলোয় প্রভাব ফেলবে না। (বণিক বার্তা থেকে)