শ্রমিক নিরাপত্তা বাড়াতে চাপ দিলেও পোশাকের দাম বৃদ্ধি করেনি বিদেশি ক্রেতারা
ইয়াছির আরাফাত : রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশী ক্রেতাদের কাজের পরিবেশ নিরাপদ করার চাপে পড়ে গার্মেন্টস মালিকরা আর সেই সুবাদেই কাজের পরিবেশ নিরাপদে তাদের খরচ করতে হয়েছে বাড়তি টাকা। ঢাকার গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা যেখানে প্রায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করে সেই কারখানার মালিক বলেন, কাজের পরিবেশ নিরাপদ করার জন্য তার কারখানায় প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
বিভিন্ন কারখানার কয়েকজন মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, যারা কারখানা নিরাপদ করার জন্য টাকা ব্যয় করেছেন, তারা সেটি পুষিয়ে নেবার জন্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও বিনিয়োগ করেছেন। ফলে পোশাক রপ্তানির অর্ডার পাবার জন্য কারখানাগুলোর মধ্যেও চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এজন্য দাম বাড়ানোর কথা চিন্তাই করছেন না বিদেশী ক্রেতারা। গার্মেন্টস কারখানার মালিক আরশাদ জামাল বলেন, বাংলাদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে আয়ে বেড়েছে, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি কারখানাগুলোর অনেকেই কমপ্লায়েন্স রাডারের বাইরে প্রায় দুই-আড়াই হাজার ফ্যাক্টরি রয়েছে তারাও করছে।
জনাব জামাল প্রশ্ন তোলেন, এই প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশেই যদি আরেকটি প্রতিষ্ঠান কম অফার করে, তাহলে বায়াররা (ক্রেতারা) কেন স্বপ্রণোদিত হয়ে দাম বাড়াতে যাবে? পোশাকের দাম আসলে বেড়েছে নাকি বাড়েনি সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বিদেশী ক্রেতারা এ বিষয়ে যেমন তথ্য দিতে নারাজ তেমনি বাংলাদেশী মালিকরা যে তথ্য দিচ্ছেন সেটি যাচাই করার সুযোগও কম।
তবে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে দেখা যাচ্ছে গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। দাম না বাড়লেও রপ্তানি বাড়ছে কেন?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ববাজারে সাধারণ মানুষ যে ধরনের কাপড় পরিধান করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সে ধরনের কাপড় বেশি রপ্তানি করে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। সেজন্য রপ্তানির আকারও বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দাম দিয়ে নয়, বেশি রপ্তানি করে সেটি পুষিয়ে নেয়া হচ্ছে।
মালিকরাও বলছেন গণ চীন এবং ভিয়েতনাম থেকে কিছু অর্ডার এখন বাংলাদেশে আসছে। কারণ ভিয়েতনামে মজুরি বৃদ্ধির কারণে পোশাকের দামও বেড়েছে।
একদিকে কারাখানা নিরাপদ করার জন্য টাকা খরচ এবং অন্যদিকে তৈরি পোশাকের দাম না বাড়লেও তাতে মালিকরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি মনে করেন না শ্রমিক পক্ষ।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, মালিকরা এ কথাটা সবসময় একটা প্রোপাগান্ডা হিসেবে রাখে যে আমাদের অর্ডার চলে গেলো, আমাদের ফ্যাক্টরি ধ্বংস হয়ে গেলো। শ্রমিকের মজুরি কম দেয়ার জন্য, শ্রমিকদের আরো ঠকানোর জন্য তারা এ ধরনের প্রোপাগান্ডা সবসময় চালায়। ২০১৮ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৪ সালে এই আয় ছিলো ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যাই হোক না, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুব একটা কঠিন হবে না। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান