বাণিজ্য চুক্তিতেই শেষ হবে না চীন-মার্কিন দ্ব›দ্ব, পরবর্তী সংঘাত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে
নূর মাজিদ : চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়। প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো, বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে কোন নতুন বিষয় নয়। বরং অনেক দেশের মাঝেই অঘোষিত বাণিজ্যিক সংঘাতের প্রবণতা দেখা যায়। এইক্ষেত্রে কেবল চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ খানিকটা ব্যতিক্রম। এখানে পর¯পরের পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েই দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক দ্ব›েদ্বর সূচনা হয়। পরবর্তীতে এর কারণেই উভয় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসে। তাই নতুন শর্তের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক কাঠামো তৈরিতে উভয় দেশ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে। এই চুক্তিতে যদিও বাণিজ্যিক সংঘাত কমবে, কিন্তু দেশদুটির মাঝে পরবর্তী সংঘাতের কেন্দ্র ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে আছে। আর সেটা হলো প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং তা বাজারজাতকরনের নতুন লড়াই। সূত্র : বিবিসি ।
চীনা প্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার দখলের ক্ষেত্রে পশ্চিমা উদ্বেগের সবচাইতে বড় কারণ হলো চীনের ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ লক্ষ্যমাত্রা। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২৫ সালের মধ্যে চীনকে বিশ্বের প্রধান উন্নত প্রযুক্তির পণ্য সরবরাহকারী দেশে পরিণত করতে চান। ফলে, মার্কিন অর্থনৈতিক মডেলকে অনুসরণ করার পথে এগিয়ে যাবে চীন। একইসঙ্গে, দেশটি বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে অন্য যে কোন দেশের সরকারের চাইতে বেশি আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। ২০১৮ সালে শুধুমাত্র ডিজিটাল সিল্ক রোড কার্যক্রমের পরিধি উন্নয়নেই দেশটি ২০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করার ঘোষণা দেয় চীন। বিশ্বের ৮০টি দেশের অর্থনীতিকে এই পরিকল্পনার আওতায় নিজের বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায় চীন। যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরিষ্কার উদ্বেগের কারণ। শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই সিনেটকে তাদের মতামত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, চীনের সঙ্গে নিজ অর্থনীতিকে স¤পৃক্ত করে এই সকল দেশ মার্কিন প্রভাবকে অগ্রাহ্য করার সক্ষমতা অর্জন করবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
তাই নিশ্চুপ বসে নেই মার্কিন সরকারও। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত নানা দেশের সরকারের ওপর তারা কূটনৈতিক চাপের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। একইসঙ্গে, আফ্রিকায় চীনা প্রভাব কমাতে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মতো মার্কিন দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রদেয় ঋণের পরিমাণও বাড়িয়ে চলেছে। তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তির লড়াইয়ে সবচাইতে বড় উদাহরণ হুওয়েই। কো¤পানিটির ৫ম প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেশে। এর পেছনে মূল ভূমিকাও ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের।
এই বিষয়ে মার্কিন নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা রিস্ক কন্ট্রোলের বাণিজ্যিক বিশেষজ্ঞ আন্ড্রু গিলহম বলেন, গত কয়েক বছরে চীন তার বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির উচ্চাভিলাষ নিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। এই দিক থেকে এখন দেশটির প্রভাবকে অস্বীকার করার কোন অবস্থা নেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বিশেষ করে, বর্তমান বিশ্বে সকল দেশের কাছেই প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকাটাই প্রধান গুরুত্বের। তাই বিনা লড়াইয়ে চীনকে নিজের অবস্থান ছেড়ে দিতে রাজী নয় যুক্তরাষ্ট্র। স¤পাদনা : ইকবাল খান