আমদানির চেয়ে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ প্রয়োজন
জাগোনিউজ : দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ৫১ লাখ ২৭ হাজার টন। এর পুরোটাই আমদানি নির্ভর। অর্থাৎ বছরে ৪৬ লাখ ২১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। ফলে প্রতি বছর ২৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ চলে যায় বিদেশে।
এ অবস্থায় দেশে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সরিষা, তিসি, সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলজাতীয় শস্য আবাদের ক্ষেত্র স¤প্রসারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে তেলবীজ জাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী ইত্যাদি চাষ হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র চার ভাগে তেলবীজের চাষ হয়। দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী নতুন নতুন তেলবীজের জাত উদ্ভাবন করে ব্যাপক হারে আবাদ করতে হবে। সরিষার উৎপাদন কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে শস্য বিন্যাস অনুযায়ী প্যাকেজ গবেষণা করতে হবে। ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে হবে। এজন্য আমরা কাজ করছি। তেলবীজ চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তেলবীজের উৎপাদন বাড়াতে মাঠপর্যায়ে সরিষার আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ এবং কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হবে।’
সরিষা বা তৈলবীজ চাষ স¤প্রসারণ ও ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে গত ১৯ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কৃষিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি ডিপিপি প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (গবেষণা) আহŸায়ক করে আট সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন এবং তা মন্ত্রণালয় দাখিল করতে বলা হয়।
যুগ্ম সচিব (গবেষণা) বলাই কৃষ্ণ হাজরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ভোজ্যতেল জাতীয় শস্যের উৎপাদন বাড়াতে কোথায় কী নির্দেশনা দেয়া যায়, কী করা যায়Ñ সেজন্য কমিটি একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। অতিরিক্ত সচিব বিদেশ থেকে ফিরলে আগামী ২৬ অথবা ২৭ এপ্রিলের দিকে কৃষিমন্ত্রীর কাছে এটি হস্তান্তর করা হতে পারে। পরিকল্পনা আছে, আগামী অর্থবছর থেকে আমরা ডিপিপি অনুমোদনসহ বাস্তবায়নে যাবো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭ সালের তথ্যসূত্র উল্লেখ করে বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ৪৬ লাখ ২১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়। যার মোট মূল্য ২৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বর্তমানে উৎপাদিত তেল ফসল থেকে আহরিত তেল এবং রাইস ব্রান অয়েল মিলে বছরে অভ্যন্তরীণ ভোজ্যতেল উৎপাদন প্রায় পাঁচ লাখ টন। কিন্তু আমদানি হয় তার নয়গুণেরও বেশি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটর (বারি) এক কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে সরিষা ও অন্যান্য ভোজ্যতেল ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। বীজ ভালো হলে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। বারি ও বিনার কাছ থেকে বীজ বিএডিসির স¤প্রসারণ কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রোপা-আমন, সরিষা ও বোরোÑএ তিন ফসলের একটি প্যাকেজ তৈরি করে কৃষকদের দিতে হবে। সরিষার ফলন বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমে আমন ধানের জাত নির্বাচন করতে হবে। আমন ধানের এমন জাত রোপণ করতে হবে যা স্বল্পমেয়াদের এবং অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কাটা যায়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সরিষার বীজ বপন করতে হয়। নভেম্বরের ১৫ তারিখের পর সরিষা চাষ করলে ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি অল্টারনেরিয়া বøাইট রোগ বেড়ে যায়। এতে ফলন হ্রাসসহ বীজে তেলের পরিমাণও কমে যায়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটর (ব্রি) এক কর্মকর্তা বলেন বর্তমানে বাংলাদেশের মাত্র এক লাখ ১৮ হাজার টন রাইস ব্রান অয়েল উৎপন্ন হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ছয়টি কোম্পানির যে সক্ষমতা আছে তা থেকে এখনই দুই লাখ ২৫ হাজার টন ব্রান রাইস অয়েল উৎপাদন সম্ভব জানান। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত ও রেজাউল আহসান