আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর : নিহতদের প্রতি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা
স্বপ্না চক্রবর্তী ও এমএ হালিম : ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা সাভারে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধ্বসের ৬ বছর পালিত হয়েছে গতকাল বুধবার। দিবসটি উপলক্ষে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহ নানা শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষ নিহত ও নিখোঁজদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকের নেতৃত্বে বিভিন্ন কারখানা মালিকরা সাভারে রানা প্লাজা প্রাঙ্গণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে দলে দলে মিছিল নিয়ে ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সামনে হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ।
তারা একে একে ভবন ধ্বসের স্থানে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় রানা প্লাজায় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া দলীয় এবং সংগঠনের ব্যানার ছাড়াও অনেক আহত শ্রমিক এবং স্বজনহারা লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভবন ধ্বসে নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরণে ঢাকা জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ভবন ধ্বসের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রানা প্লাজা প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিজিএমইএ এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, আমরা কোনোভাবেই চাই না রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। এ ক্ষতি অপূরণীয়। নিহত সব শ্রমিকের আত্মার শান্তি কামনা করছি। রানা প্লাজার পর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নতুন করে পোশাক খাত বিশ্বের বুকে জায়গা করে নিয়েছে। শ্রমিকদের কল্যাণে ও মানোন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নতি হয়েছে। রানা প্লাজায় নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য নতুন করে করার কিছুই নেই। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে। সবসময় এরকম ঘটনা রোধে সোচ্চার থাকবে বিজিএমইএ।
দিবসটি উপলক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই শিল্পাঞ্চল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট সৌমিত্র কুমার দাশ, আহসান হাবিব বুলবুল, আনিসুর রহমান, কাওসার আহমেদ প্রমুখ। সভায় বক্তাগণ বলেন, রানাপ্লাজা ধ্বসের ৬ বছর পূর্ণ হলেও ভবন ধ্বসে হত্যাকাÐে নিহত ১১৩৬ জন শ্রমিক পরিবার তাদের স্বজন হত্যার বিচার পায়নি। হত্যাকাÐে অভিযুক্ত ভবন মালিকসহ গার্মেন্টস মালিকদের কোন বিচারই হয়নি। ফলে মালিকরা দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।
তারা দাবি করেন, শ্রমিক হত্যাকাÐের সাথে জড়িতদের বিচারের ন্যায্য দাবিতে কথা বলতে গেলে নিরীহ শ্রমিকদের ও শ্রমিকনেতাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। অবিলম্বে শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ৪৮ লক্ষ টাকা করা সহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তারা।
রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের আরও স্মরণে সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলো।
এদিন ছেলের স্মৃতি মনে করে সাভারে রানা প্লাজার সামনে ছবি নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার তৃতীয় তলার নিউ ওয়েব বটম লিমিটেড কারখানার শ্রমিক সেলিমের মা সহ অনেক নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান