ব্রুনাই সফরে দুই দেশের সম্পর্ক পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়, বললেন প্রধানমন্ত্রী
স্বপ্না চক্রবর্তী : টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ব্রুনাই ছিলো প্রথম সফর এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সফরকালে ব্রুনাই এর সুলতান আমার এবং আমার সফরসঙ্গীদের প্রতি যে আতিথেয়তা ও সম্মান দেখিয়েছেন তা খুবই বিরল। সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণভবনে ব্রুনাইয়ের সরকারি সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফরে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সফরে ব্রুনাইয়ের সুলতানের উপস্থিতিতে কৃষি, সংস্কৃতি ও শিল্প, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য, পশু সম্পদ, জ¦ালানি খাতে ৬টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ব্রুনাই-বাংলাদেশ। এছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ছাড়া ভ্রমণ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য, জ¦ালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিমান যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করি। ব্রুনাই-এর পক্ষে সুলতান আমার প্রস্তাবসমূহকে স্বাগত জানান এবং এগুলো বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্রুনাই খাদ্য ও কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখপূর্বক এসব ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে। কৃষিক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতাসহ যৌথভাবে খামার স্থাপন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিপণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়। তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চালুর জন্য সমীক্ষা পরিচালনা এবং ভবিষ্যতে দ্বৈতকর অব্যাহতি চুক্তি এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ চুক্তির সম্ভাব্যতা বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জ¦ালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পর্যটন অবকাঠামো, পাট শিল্প ইত্যাদি প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বিনিময় ও সহযোগিতা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে দু’দেশের মধ্যে আর্থিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। সামরিক খাতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা একমত হই।
এছাড়া স্বাস্থ্যখাতে প্রশিক্ষণ ও পেশাজীবীদের নিয়োগ, ওষুধ উৎপাদন ও বাণিজ্য, বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই ঐকমত্য পোষণ করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা জানান, ব্রুনাই-এর সুলতান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুলতান শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। আসিয়ান, ওআইসি, কমনওয়েলথ এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে মতৈক্য হয়। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান