মেয়েরা যাতে বাবার সম্পত্তি বঞ্চিত না হয়, সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
সমীরণ রায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছেলে হোক মেয়ে হোক দু’টি সন্তানই যথেষ্ট, এটাই আমাদের শ্লোগান। কিন্তু যে বাবা-মায়ের দু’টি সন্তানই মেয়ে তাদের সন্তানরা বাবার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে। মেয়েরা যাতে বাবার সম্পত্তি বঞ্চিত না হয়, সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। শরিয়া আইনে হাত দিতে বলবো না। কিন্তু সম্পত্তি আইনে এটার একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত, পৈতৃক সম্পতিতে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ইন্টার-কন্টিনেন্টাল হোটেলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা বিচার না পেয়ে কেঁদেছি, আর যেন কাউকে কাঁদতে না হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ও সমাজে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধই সবচেয়ে বেশি। এ বিরোধ কমিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যথাযথ আইন ও তার সঠিক প্রয়োগ। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কোন্দল, খুন খারাবি বা সম্পত্তি থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা যাবে না। যারা অসহায় দরিদ্র তাদের পাশাপাশি অনেক অর্থশালী-সম্পদশালী পরিবারেও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ প্রকট। বিশেষ করে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ইসলাম ধর্মেই একমাত্র মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া আছে। তবে ধর্মে থাকার পরেও অনেক সময় মেয়েরা বঞ্চিত হয়। বাবার সম্পত্তিতে তারা ভাগ পায় না, ভাইয়েরা দিতে চায় না। বাবার সামনে ছেলে মারা গেলে ছেলের সন্তানরা কোন সম্পত্তির ভাগ পেত না, পাকিস্তানি শাসকদের করে যাওয়া এমন একটি আইনের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন বস্তি এলাকায় এবং রাস্তায় রাস্তায় অনেক ছোট ছোট শিশু ঘুরে বেড়াত। আমি তাদেরকে নিয়ে এসে কথা বলি। জানতে চাই- কেন তারা বস্তিতে থাকে? কি কারণে এসেছে? তখন জানতে পারি সমাজের অন্ধকার দিকের কথা। সেখানে দেখা যায়, ভাই ভাইকে খুন করেছে বা আত্মীয় স্বজন খুন করে সম্পত্তি দখল করে নিয়ে ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে স্ত্রীসহ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের স্থান হয়েছে বস্তিতে। ছেলে-মেয়েরা হয়ে গেছে টোকাই। আর নারীর ভাগ্য কি হতে পারে বুঝতেই পারেন, হয় সে নিজে বাড়ি বাড়ি কাজ করে খাচ্ছে অথবা পতিতালয়ে স্থান পাচ্ছে। এই যে সামাজিক অবিচারটা হয়, এগুলোর দিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, সন্তান ছেলেই হোক মেয়েই হোক, অন্তত তার ভাগটা সে পাবে। এটা বলতে গেলে অনেক হুজুর লাফ দিয়ে উঠতে পারে? কিন্তু তারপরও এই সমস্যাটা সমাধান করা দরকার। এটা অনেকের মনে কথা আমি জানি। অন্তত যাদের মেয়ে আছে, তারা এটাই ভাবেন, এমন মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমাদের অনেক ধর্মীয় নেতার সাথেও এ ব্যাপারে আলোচনা করিছি। তাদেরও অনেকের শুধু মেয়েই রয়েছে। তারাও কিন্তু বলেছেন, মেয়েদের অধিকারও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সমস্যা আরও আছে, সম্পত্তি লিখে দিলেন মেয়ের নামে, দুইদিন পরে জামাই এসে আপনাদেরও বের করে দেবে! তখন আপনি কোথায় যাবেন! অনেক সময় দেখা যায়, সম্পত্তি পেয়ে গেলে মেয়েরাও আর বাপ-মাকে চেনে না। তখন মা-বাবা হয়ত রাস্তায়! আর এখন অবশ্য অনেক বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে, সেখানে ঠাঁই হয়ে যায়। গত ১০ বছরে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে আওতায় মোট ১ লাখ ৬৮৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পরিচালক আমিনুল ইসলাম।
এছাড়াও তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বেসরকারিভাবে মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি)’র চেয়ারম্যান তৌফিকা করিম, লিগ্যাল এইডের সেরা প্যানেল আইনজীবী হিসাবে অ্যাডভোকেট ফাতেমা বেগম এবং সেরা লিগ্যাল অফিস হিসাবে বরিশাল অফিসকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সম্পাদনা : ইকবাল খান