পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫ কোম্পানির শেয়ার অফলোড সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই ২১ মাসেও
সোহেল রহমান : পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডে লোকসানি ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিকে লাভজনক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোম্পানিগুলো এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডের জন্য একটি কোম্পানিকে পর পর দুই বছর মুনাফা অর্জন করতে হয়। এ প্রেক্ষিতে লাভজনক করার লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ পুনর্গঠন, লাভজনক না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ এবং সে মোতাবেক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে নির্দেশ দিয়েছিলো সরকার।
চিহ্নিত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৯টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ৪টি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২টি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑলিক্যুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি (বিজিএফসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ও বিটিসিএল।
জানা যায়, চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর গৃহীত কার্যক্রম মনিটরিং করতে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিলো। কিন্তু এরপর ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের ওইসব নির্দেশনা পরিপালনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। তবে জ্বালানি বিভাগের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা টুকটাক বৈঠক করেছে। বাকিগুলো তা-ও করেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সবগুলো কোম্পানিকে বিএসইসি ও আইসিবি’র সহযোগিতায় শেয়ার অফলোডের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শেয়ার অফলোডের বিষয়ে কোম্পানিগুলো এখনও কোনো ইতিবাচক মতামত দেয়নি। এক্ষেত্রে জ্বালানি বিভাগের কোম্পানিগুলো তাদের আয়/মুনাফা কমে যাওয়া ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ নিজেদের অর্থায়নেই বাস্তবায়ন সম্ভব দাবি করে বলেছে, গ্যাসের নতুন রিজার্ভ আবিষ্কার/উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে শেয়ার অফলোড করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তাদের কোন তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেনি।
জানা যায়, শেয়ার অফলোডের বিষয়ে আইসিবি’র সঙ্গে টেলিটক-এর বৈঠক হয়েছে। আইসিবি’র পরামর্শ অনুযায়ী টেলিটক-কে লাভজনক করার জন্য সম্ভাব্য আর্থিক চাহিদা, ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সম্বলিত একটি লাভজনক রূপরেখা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়া বিটিসিএল-এর শেয়ার অফলোডের লক্ষ্যে কোম্পানিটির ব্যালেন্স-শিট আইসিবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এ বিষয়ে আইসিবি ইতিবাচক মতামত দিলে শেয়ার অফলোডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। টেলিটক ও বিটিসিএল-কে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে তাগিদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অন্যান্যের মধ্যে লাভজনক ‘বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড’ ও ‘টেলিফোন শিল্প সংস্থা’-কে শেয়ার অফলোডে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোডের প্রক্রিয়া প্রায় ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে। গত ২০০৯ সালে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয় সরকার। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২১টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে বলা হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আগের ৫টি কোম্পানিকে আরও শেয়ার বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারপর সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হলেও এক্ষেত্রে কার্যকর কোন অগ্রগতি হয়নি।
অন্যদিকে গত ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮টি সরকারি কোম্পানির নির্ধারিত পরিমাণ শেয়ার অফলোড কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া নানা কারণে/আইনগত প্রয়োজনে ২৯টি সরকারি কোম্পানির শেয়ার অফলোড কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান