একনেকে ১০,১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প অনুমোদন
সোহেল রহমান : বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি সাময়িকভাবে সংরক্ষণে ঢাকার শ্যামপুরে কদমতলী থানার আওতাধীন ‘উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি’র নিজস্ব জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪টি গুদাম নির্মাণসহ ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি উৎস থেকে ৪ হাজার ৪০৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অবশিষ্ট ৫ হাজার ২২০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে বৈদেশিক ঋণ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিং-এ পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদির কারণে উদ্ভূত অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি থেকে পুরানো ঢাকার জনগণকে রক্ষার জন্য মানবিক কারণে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে ৫৪টি কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ঢাকার শ্যামপুরে কদমতলী থানার আওতাধীন ‘উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি’র নিজস্ব জমিতে এসব গুদাম নির্মাণ করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এসব গুদাম নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সম্পূর্ণ সেবামূলক ও অলাভজনক এ প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ অনুদান হিসেবে দেবে সরকার।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এসব গুদাম নির্মাণ করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকা দেবে সরকার এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবশিষ্ট ৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরানো ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদামজনিত দুর্যোগ থেকে দ্রুততম সময়ে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এবং চাহিদা অনুযায়ী নিরাপদে রাসায়নিক পদার্থ আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ করা যাবে বলে মনে করছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইআইএ প্রতিবেদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র সংগ্রহের পাশাপাশি প্রকল্পের অধীনে একটি ছোটো আকারের ইটিপি স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, একনেক সভায় বিসিক-এর আওতায় একটি স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনে ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূল প্রস্তাবে এটি ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ৫০ একর জায়গায় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু জায়গাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় প্রকল্পটি এখন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমি জুড়ে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে কেমিক্যাল গোডাউনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুরোনো ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে না। বিসিক-এর কেমিক্যাল পল্লীতে কেমিক্যাল গোডাউন স্থাপনে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি বরাদ্দ দেয়া যাবে না এবং এ জমি যাতে অন্য কাজে ব্যবহৃত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।’
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছেÑ ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ’ (তৃতীয় সংশোধিত) এবং এর সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা; ‘চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ’ (প্রথম সংশোধিত) এবং এর সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা; ‘প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প’ (তৃতীয় সংশোধিত) এবং এর সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা; ‘সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা; ‘নীলফামারী জেলার চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়িতিস্তা নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প’ এবং এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সম্পাদনা : ইকবাল খান