আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন রাখার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী
* সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার সিদ্ধান্ত
* উপক‚লে ৪-৫ ফুট জলোচ্ছাসের আশংকা
* সারাদেশে নৌযান বন্ধ
* ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রস্তুত
আনিস তপন : ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিভিন্ন সংস্থার কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনসংক্রান্ত সভার আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফনীর আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের দিকে আসছে। এর তীব্রতা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত থেকে এখন ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনা। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আবহাওয়াা অধিদপ্তরের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বাংলাদেশে হয়তো আঘাত হানবে এই ঘূর্ণিঝড়। সেজন্য সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস, নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ ঝড়ের বিষয়ে জেনে গেছেন, তাই তারা নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উপকূলীয় জনগণের সেবায় যারা নিয়োজিত থাকে তারা অভিজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাছাড়া নিরাপত্তাজনিত সচেতনতা নিয়ে প্রতিটি জেলায় সভা হচ্ছে। উপজেলাগুলোতেও সভা হচ্ছে এবং সবগুলো এলাকায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপর এওক প্রশ্নের জবাবে প্রতিটি উপজেলার ফায়ার সার্ভিস অফিসে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সভায় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছেন। ফলে সকল বাহিনীকেও এখান থেকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে সকালে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্সালিস্ট ফোরামের সঙ্গে মত বিনিময়কালে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফনী।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়ের ভেতরে বাতাসের গতিবেগ আছে ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। আমাদের কর্মপরিকল্পনা একইরকম। বাতাসের গতিবেগ বাড়লেও কর্মপরিকল্পনার পরিধি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়, খাবার এবং পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনা যেভাবে হবে সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম পরিচালনার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ৪ হাজার ৭১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সোলার সিস্টেম রাখা হয়েছে। তাদের সুপেয় পানির জন্য ত্রিশটি ট্রাক মাউন্টেন রাখা হয়েছে। এসব ট্রাক লবণাক্ত পানিকে সুপেয় করে খাওয়ার উপযোগী করবে।
উপক‚লীয় অঞ্চলগুলোতে ৪ থেকে ৫ ফুট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জলোচ্ছ¡াস হওয়ার আশংকা রয়েছে। এসব এলাকায় সেসময় ঘন্টায় ৯০ থেকে ১০০ বেগে দমকা বা ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য সমুদ্রে চলাচল করা নৌযান ও ট্রলারগুলোকে সাবধানে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে সবধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডবিøউটিএ। পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত ৪১টি রুটে বন্ধ থাকবে নৌযান চলাচল। উপকুলীয় অঞ্চলে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে নিদের্শ দিয়েছে স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়ছে আনসার, বিজিবিসহ সব বাহিনীর সদস্যদের। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে সব জায়গায়। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজে ৩২ নৌজাহাজ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী।
এদিকে বিকেলে সচিবালয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাথেকে মাঠ প্রশাসনসহ সরকারের সব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সর্বত্মক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দূর্যোগমুহূর্তের আগে আক্রান্ত এলাকাবাসীদের নিরাপদ সাইক্লোন সেন্টারে সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। তাছাড়া সাইক্লোন সেন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যেসব সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে তা যদি ফনীর আঘাতে নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেজন্য প্রয়োজনে হ্যাজাক লাইট বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক হ্যারিকেনসহ বিকল্প ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার জম্মার নামাজ শেষে যাতে সব মসজিদে ঘূর্ণিঝড় থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় ফনীর কারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি কন্ট্রোলরুম চালু করেছে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি তথ্য ও নির্দেশনা আদান-প্রদানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সচিবালয়ের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কন্ট্র্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কক্ষ নং ৮০১/ক ও ০২-৯৫৪৬০৭২ নম্বর টেলিফোনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।