আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখতে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন পেট্রোবাংলার
শাহীন চৌধুরী : দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবেলার জন্য এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি লোকসানের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে পেট্রোবংালার। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের বিপরীতে যে লোকসান হচ্ছে, তা কমাতে সরকারের কাছে ৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা চেয়েছে পেট্রোবাংলা। এছাড়া অতিরিক্ত আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে বাড়তি ২৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, এলএনজি আসার কারণে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম শূন্য দশমিক ৫৫৬২ টাকা বাড়াতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসেনি। ফলে লোকসান অব্যাহত রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের তিনটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন গ্যাসক্ষেত্রের বর্তমান রির্জাভ ও উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনা করে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহŸান করার জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জ্বালানি বিষয় উপদেষ্টার সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানান জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং জ্বালানি খাতে লোকসান কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গ্যাসক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ও উৎপাদন চলমান থাকায় এই দুই ধরনের ক‚প থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য কোন ক‚পগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্যাস উৎপাদন করা যায় এবং চলমান ক‚পগুলোর উৎপাদন বাড়ানো যায়, এ জন্য কারিগরি পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। এই পর্যালোচনা শেষে বলা যাবে গ্যাস উৎপাদন কতোটুকু বাড়বে। এই কাজ করার জন্য এবং সম্ভাব্য ক‚প থেকে গ্যাস উৎপাদনে আগ্রহী কোম্পানি খুঁজতেই আন্তর্জাতিক আগ্রহপত্র আহŸান করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির (বিজিএফসিএল) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাস রয়েছে এই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। এই গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমানে ২৬টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৫৪২ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও বর্তমানে ৪৯৫ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের ৭টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ২২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও উৎপাদন করা হচ্ছে ২০২ মিলিয়ন ঘনফুট।
বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে এখানে উৎপাদন হচ্ছে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। নরসিংদী গ্যাসক্ষেত্রের দু’টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ২৯ মিলিয়ন ঘটফুট। মেঘনা গ্যাসক্ষেত্রের ১টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে এখন উৎপাদন হচ্ছে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসাবে বিজিএফসিএল নিয়ন্ত্রণাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের মোট ৪২টি ক‚পের মাধ্যমে ৮৫১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা থাকলেও এগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে ৭৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এদিকে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র। এগুলোর ১২টি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও এখন উৎপাদিত হচ্ছে ১২১ মিলিয়ন। এর মধ্যে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের একটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৬ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩ মিলিয়ন ঘনফুট। কৈলাশটিলা-১ গ্যাসক্ষেত্রের একটি ক‚প থেকে দৈনিক ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা থাকলেও ক‚পটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কৈলাসটিলা-২ গ্যাসক্ষেত্রের তিন ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে বর্তমান উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৫৯ মিলিয়ন ঘনফুট। রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও তা কমে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৫০ মিলিয়ন। আর বিয়ানিবাজার গ্যাসক্ষেত্রের দুইটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন উৎপাদন হচ্ছে ৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এছাড়া বাপেক্সের সালদা গ্যাসক্ষেত্রের একটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৩ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের দুই ক‚প দিয়ে ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা শুরু হলেও তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ঘনফুটে। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি ক‚প দিয়ে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের জায়গায় বর্তমানে ৫৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রের দুইটি ক‚প দিয়ে ৩ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে এক মিলিয়ন ঘনফুট। সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের একটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ মিলিয়ন হলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন। শ্রীকাইল গ্যাস ক্ষেত্রের তিনটি ক‚পের উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের দুইটি ক‚প থেকে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন। ক‚প দু’টির উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান