নানা প্রতিক‚লতার মুখোমুখী হওয়ায় বিশ্বব্যাপি সাংবাদিকদের কাজকর্ম কঠিন হয়ে উঠছে
ইয়াছির আরাফাত : প্রতি বছর ৩রা মে পালিত হয় বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবস। নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে গোটা বিশ্বের সাংবাদিক সমাজের সামনে। কেনো মুক্ত গণমাধ্যম প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করেছেন ভয়েস অব আমেরিকার জেসুসেহমেহ, তার রিপোর্টে। ভয়েস অব আমেরিকার কন্ট্রিবিউটর গ্রেটা ভ্যান সাস্টারেনের এ সপ্তাহের প্লাগড ইনে বিষয়টি উঠে আসে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গনমাধ্যমের স্বাধীনতা দিনদিন সংকুচিত হচ্ছে। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা বিভিন্ন সরকার ও প্রভাবশালী মহলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। চাপ বাড়ছে গণমাধ্যমের ওপর। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গনমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে। চাপের মুখে রয়েছেন সাংবাদিকরা। যে গণমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি- তার ওপর চাপ বৃদ্ধি গণতন্ত্রের সুস্থ্য বিকাশের জন্য অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন ঈড়সসরঃঃবব ঃড় চৎড়ঃবপঃ ঔড়ঁৎহধষরংঃং এর উবঢ়ঁঃু ঊীবপ. উরৎবপঃড়ৎ, জড়নবৎঃ গধযড়হবু- ‘যে কোনো দেশের সরকারকে জবাবদিহি করতে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার যারা তারা হচ্ছেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের লেখনীর কারনেই সরকারের স্বচ্ছতার বিষয় পরিষ্কার হয়। মানুষের অধিকার, তাদের করের অর্থ কিভাবে ব্যয় হয় এসব উঠে আসে সাংবাদিকদের লেখায়। সাংবাদিকদের ভ‚মিকা না থাকলে যে কোনো সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে। বিস্তার লাভ করতে পারে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম’।
সাইবার হামলা গ্রেপ্তার অপহরনসহ নানাভাবে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের দমন করার প্রয়াস চলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা গুম হয়ে যাচ্ছেন, হচ্ছেন খুন ।
সাংবাদিক নির্যাতনের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে চীন ও উত্তর কোরিয়ার নাম সবার ওপরে। যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের অবস্থান আগের তুলনায় খারাপ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমেছে। গণমাধ্যম পরিবেশের আগের অবস্থার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সা¤প্রতিক অবস্থা নেমে গেছে ৩ পয়েন্ট। গণমাধ্যম সম্পর্কে ফেক নিউজ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে আগের তুলনায় বেড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে, গণমাধ্যমের ওপর অব্যাহতভাবে হুমকী দিয়ে চলেন যা গোটা জাতির জন্যে আশংকার কারন। এ কারনে ফিলিপাইনে, এশিয়ার মধ্যে গণমাধ্যমের ওপর চাপ সবচেয়ে বেশি। মিডিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দুতের্তের চাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যম হচ্ছে র্যাপলার ।
এপ্রিলে মিয়ানমারের শীর্ষ আদালত রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে ৭ বছরের জেল দিয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতনের খবর লেখার কারনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক ষ্টিফেন জে এ্যডলার এ নিয়ে কথা বলেন, ঐ মামলা পরিষ্কারভাবে বানানো। ঘটনা সবারই জানা। একজন পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন তার কাছে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুমতিপত্র আছে। তার সে নোট পুড়ে গেছে। আরেকজন হাতে লেখা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন এটা গ্রেপ্তারের অনুমতিপত্র। তৃতীয় একজন বলেন, তাদের কাছে নির্দেশ আছে সাংবাদিকদের ধরার। এটা পরিষ্কার যে তারা ঐ খুন নির্যাতনের খবর কভার করছিলো বলে ধরা হয়েছে।
নরওয়ে এ বিষয়ে সবার শীর্ষে। তবে বিশ্বের অনেক স্থানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আগের চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে নাগরিক সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসার কারণে মানুষের বাক স্বাধীনতা প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক সুখকর নয়। ইথিওপিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
ভয়েস অব আমেরিকার আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক নেগুসে মেংগেশা প্রায় ৪০ বছর পর দেশে ফিরে গিয়ে সেখানকার গণমাধ্যমের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় ৪০ বছর তিনি ইথিওপিয়ায় যেতে পারেন নি। ইথিওপিয়ায় তিনি অবাঞ্চিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি দেশে যান। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব