ফণীর আঘাতে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ৭ জনের মৃত্যু
আবদুল্লাহ মজুমদার: গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ফণী শনিবার সন্ধ্যার পর ভারতের আসামের দিকে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। উপকূলের জেলাগুলোতে সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রতিটি জেলার বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি।
ফণীর কবলে পড়ে শুক্রবার গভীর রাত থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছে। তবে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎপৃষ্ঠ মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২০ জনেরও অধিক। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। ফণীর প্রভাবে শুক্রবার ও গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফেনী থেকে শাহজালাল ভূঞা জানান, শনিবার ঘুর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে ৭৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাতাসের গতিবেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঝড়ো হওয়ায় উড়িয়ে দেয় কাঁচা ও আধা পাকা বাড়ির ঘরের টিন ও আসবাবপত্র। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষত্রিগ্রস্থ হয় এবং চর দরবেশ ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ফণীর প্রভাবে দ্বীপজেলা ভোলায় শুক্রবার রাত থেকেই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সকালে ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে ঘরচাপা পড়ে রানী বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রানী বেগম ওই এলাকার সামসুল হকের স্ত্রী ও দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধের বাসিন্দা।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সূবর্ণচরে ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরচাপা পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে ৩০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে সেনবাগ উপজেলার মইজদীপুর আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্র্রাসার একটি ভবন বিধ্বস্ত, পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন ছাড়াও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এ সময় ঝড়ে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের বিভিন্ন স্থানে তার ও খুঁটি উপড়ে পড়ে। এতে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় গাছ উপড়ে ঘরের উপর পড়লে বিধ্বস্ত ঘরের নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের দাদী ও নাতির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন পরিবারের তিন সদস্য। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরে দক্ষিণচরদোয়ানী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন, জেলে আব্দুল বারেক ওরফে বাদা বারেকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৫৫) ও নাতি জাহিদুল (১৩)।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর তা-বে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। শনিবার ভোররাতে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে উপড়ে গেছে ওই এলাকার গাছপালাও। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এখন খোলা আকাশের নিচে শতাধিক পরিবার রয়েছেন।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সাগর প্রচ- উত্তাল উঠেছে। সাগরের পানি পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় উপকূলে আঁচড়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল, উত্তরধুরুং, লেমশিখালী ও বড়ঘোপ ইউনিয়নের ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের কয়েক শ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় ঘর চাপা পড়ে আনোয়ারা খাতুন (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোররাতে উপজেলা চরআলগি ইউনিয়নের রব রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঝড়ের সময় তিনি বসত ঘরে বসে ছিলেন। এ সময় প্রচ- ঝড়ে কাঁচাঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে তার গায়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০জন বাসিন্দা। আহতদের মাঝে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র আয়না মতি বিবি (৯২) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আয়না মতি বিবি গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের মৃত শওকত শেখের স্ত্রী। অসুস্থ অবস্থায় তিনি ঘূর্ণিঝড় ফণীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণীতে গাছ চাপা পড়ে মো. হাবিব (৩৩) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে রাতে গাছ চাপা পড়ে মো. হাবিব আহত হন।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গতকাল শনিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে দমকা বাতাস শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে জোয়ারের পানি বেড়ে গিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে সাগরের পানি। এতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়িসহ ফসলাদি।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, ঝড়ো হাওয়ায় বরিশালে এক হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৯ হাজার ৫৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।