রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ বাড়ছে
শাহীন চৌধুরী : আরেক দফা বাড়বে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ। পাবনার রূপপুরে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রোসাটমের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত এই রক্ষণাবেক্ষণের কারণেই বাড়ছে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের খরচ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন করে রক্ষণাবেক্ষন চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না, পৃথক খরচ হিসেবেই নির্ধারণ করা হবে। ৬০ বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত এই চুক্তি হতে পারে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে কী পরিমাণ টাকা খরচ হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সঙ্গে চুক্তি করা জরুরি। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই চুক্তি করা প্রয়োজন।
সূত্রমতে, চলতি ২০১৯ সালের মধ্যেই এই চুক্তি সই হবে। তবে এখনও তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয়নি। এদিকে, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে রোসাটমের সঙ্গে চুক্তি অনুস্বাক্ষর হবে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। ২০১৫ সালে ২৫ ডিসেম্বর মূল চুক্তি (জেনারেল কন্ট্রাক্ট) হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অধীন পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ এরই মধ্যেই শেষ হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা খরচে দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের কাজও শুরু হয়েছে।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেন্দ্রটিতে রিয়্যাক্টর বসানোর কাজ শেষ হলে ২০২২ সালে প্রথমে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং তার পরের বছর আরও এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে।
এ প্রসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর বলেন, প্রকল্পটি চালু করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন এই চুক্তি করা হচ্ছে। আমরা চুক্তির খসড়া তৈরি করছি। খসড়া তৈরির পর এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে। এই চুক্তি ৬০ বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য হতে পারে বলে তিনি জানান। সম্পাদনা : ইকবাল খান