ফাতেমা আহমেদ
রমজান মাস এলে ব্যস্ত হয়ে ওঠে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের মুড়িপল্লি নামে পরিচিত ৫টি গ্রাম। এখানে নাখুচি অথবা মোটা ধান থেকে দেশি পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজা হয়। রফতানি হচ্ছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে। স্বাদে অতুলনীয় বলে দপদপিয়ার মোটা মুড়ির খ্যাতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। এখানে বছরজুড়েই চলে মুড়ি ভাজা ও বিক্রির কাজ। তবে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে থাকা বাড়তি মুড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ততা বাড়ে মুড়ি তৈরির কারিগরদের।
রমজান উপলক্ষে তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। বরিশাল-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই দপদপিয়া ইউনিয়নের রাজাখালি, দপদপিয়া, তিমিরকাঠি, ভরতকাঠি, জুরকাঠি এবং কুমারখালী গ্রাম। রমজানে মুড়ির জোগান দিতে এসব গ্রামে দিন-রাত চলে মুড়ি ভাজার কাজ। গ্রামগুলো বর্তমানে ‘মুড়িপল্লি’ নামে পরিচিত। রমজান মাস এলেই রাত ২টা থেকে শুরু হয় মাটির হাঁড়ি-পাতিলের টুংটাং শব্দ। মুড়ি ভাজার উৎসবে জ্বলে ওঠে ৩০০ ঘরের ১ হাজার ২০০ চুলার আগুন। তৈরি হয় সুস্বাদু মোটা মুড়ি।
দপদপিয়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন তৈরি হয় ২০০ মণ মুড়ি, যা পাইকারদের হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। রমজান আসা মাত্র মুড়ির চাহিদা আরও ১০০ মণ বেড়ে যায়। দপদপিয়ার মুড়িপল্লির শ্রমিকরা প্রমাণ করেছেন মুড়ি ভাজাই একটা শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা। রোজার মাসকে সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির চাহিদা। উৎসবের আমেজে পরিবারের সবাই মিলে শুরু করে মুড়ি ভাজার কাজ। একটু বাড়তি লাভের আশায় পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরাও হাত লাগায় মুড়ি ভাজার কাজে। সরেজমিনে জানা যায়, শ্রমিকদের মধ্যে যারা একটু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে আনে। তারপর বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করে। আবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তারা আড়তদারদের কাছ থেকে বিনামূল্যে চাল আনে। এই চাল দিয়ে মুড়ি ভেজে আড়তে সরবরাহ করে। এতে তাদের লাভ কম হয়। প্রতিদিন একজন গড়ে ৫০ কেজি চাল ভাজতে পারে। যেখান থেকে ৪২-৪৩ কেজি মুড়ি পাওয়া যায়। এখানকার মুড়ি ৭৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং ৮৫ টাকা খুচরা বিক্রি হয়। তবে সম্প্রতি এ শিল্পে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। মেশিনের মাধ্যমে রাসায়নিক মিশিয়ে কম খরচে মুড়ি তৈরি করে কম মূল্যে বাজারজাত করায় গ্রামবাসীর রোজগারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পাইকার ও আড়তদারদের দৌরাত্ম্যে লাভ থাকছে সামান্য।