বছরের ব্যবধানে রপ্তানি বেড়েছে হাজার কোটি টাকাঅর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি আয় ৩৩৯৩ কোটি ডলার
স্বপ্না চক্রবর্তী : মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি বেড়েছে। ইতিবাচক ধারায় রয়েছে রপ্তানি আয়। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তাান হয়েছে (জুলাই-এপ্রিল) তিন হাজার ৯৩৯ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের ১০ মাসে মোট রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্য রপ্তানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৮ শতাংশেরও বেশি হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তাান আয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য দেখা যায়। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো তিন হাজার ১৯০ কোটি ডলার। এ সময়ে আয় হয়েছে তিন হাজার ৩৯৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সমেয়ের তুলনায় এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয় ছিলো তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিলে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৩ কোটি ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে এ মাসে আয় কমেছে পাঁচ কোটি ডলার। তবে গত বছরের এপ্রিলে এ আয় হয়েছিলো ২৯৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় এসেছে দুই হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ছিলো দুই হাজার ৬৭৪ কোটি ডলার।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বড় খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ৪৫ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় কৃষিপণ্য রপ্তানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া, প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ১১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। পাট ও পাটজাত খাত থেকে এপ্রিল শেষে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ৮ দশমকি ৬৯ শতাংশ কমেছে। আলোচিত সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে ৯১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
রপ্তানি আয়ের এ সুখবর নিয়ে আশাবাদী ব্যবসায়ীরাও। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, রপ্তানি আয়ের সুখবর নিয়েই অর্থবছর শুরু হয়েছিলো। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর মূল কারণ দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অন্য খাতেরও আয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা বছরের পরবর্তী মাসগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আর ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান