বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ১০টি পেইন্টিংয়ের দাম দিয়ে যেসব বিলাসবহুল জিনিস কেনা যাবে
আবুল বাশার
শিল্প দাম দিয়ে কেনা যায় না বলেই শুনেছেন হয়তো। কিন্তু আসলেই কি তাই? দাম দিয়ে শিল্প মানুষই কিনে। দামী দামী পেইন্টিংগুলো মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দামের বিপরীতে অসংখ্য ক্রেতা পাওয়া যায়। অথচ এসব পেইন্টিং কেনার টাকায় ক্রেতারা যেসব জিনিস কিনতে পারতেন তা দেখেই আপনার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে! চলুন দেখে আসা যাক তেমনই ১০টি পেইন্টিংয়ের বিপরীতে কি কি ক্রয় করা যেতে পারে।
১০. জেইন (স্প্রিং), এডোয়ার্ড ম্যানেট, ৬৯.৪ মিলিয়ন ডলার : ফেঞ্চ আর্টিস্ট এডোয়ার্ড ম্যানেটের আঁকা জেইন (স্প্রিং) এর দাম ৬৯.৪ মার্কিন ডলার। এটি তিনি আঁকেন ১৯৮১ সালে। এটি অর্ধেক এঁকেই শিল্পী মারা যান। এই পেইন্টিং না কিনে আপনি ১৯৬৩ মডেলের ফেরারী ২৫০ জিটিও কিনতে পারেন ৫২ মিলিয়ন ডলারে। প্রায় ১৭.২ মিলিয়ন ডলার কিন্তু বেঁচে যাবে!
৯. ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ার, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ৮৮.১ মিলিয়ন ডলার : ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ারের সাতটি ভার্সন রয়েছে, বিভিন্ন রংয়ের ও বিভিন্ন পরিমাণের। এটির মূল্যমান ৮৮.১ মিলিয়ন ডলার। অথচ, ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামী হীরে হিসেবে বিক্রি হওয়া পিঙ্ক স্টারের ৫৯.৬০ ক্যারটের দাম ছিলো ৭১.২ মিয়িন ডলার।
৮. লে ব্যাসিন অক্স নিমপেয়াস, ক্লাউডি মনেট, ৯৪.২ মিলিয়ন ডলার : ক্লাউডি মনেটের পেইন্টিং লে ব্যাসিন অক্স নিমপেয়াস ২৫০ টি পেইন্টিংয়ের একটি সিরিজের অংশ। এর দাম ৯৪.২ মিলিয়ন ডলার ধরা হয়। অথচ ড্রকুলা’স ক্যাসেল নামের বিখ্যাত ক্যাসেলটি কিনতে গেলে খরচ পড়বে এর চেয়ে কম, ৯০ মিলিয়ন ডলার। এই ক্যাসেলটি নির্মিত হয় ১৩৮৮ সালে।
৭. লা মন্টেগেন স্যান্ট-ভিক্টোয়ার ভু ডু বস্কেট দু চাতাউ নোর, পল সেজান, পল সেজান, ১০৮ মিলিয়ন ডলার : ১৯০৪ সালে আঁকা এই পেইন্টিংটির বর্তমান দাম ১০৮.২ মিলিয়ন ডলার। অথচ, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য কেনা বোয়িং ৭৫৭-র দাম ১০০ মিলিয়ন ডলার।
৬. দ্য স্ক্রিম, এডভার্ড মাঞ্চ, ১৩০ মিলিয়ন ডলার : ২০১২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পেইন্টিং হিসেবে বিক্রি হওয়া পেইন্টিং দ্য স্ক্রিম বিক্রি হয়েছিল ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে। অথচ, ২০২০ সালে নির্মাণ শেষ হতে যাওয়া পিজে ওয়ার্ল্ড এক্সপে�ারার সুপারইয়র্টের দাম পড়বে ১১৮.৭ মিলিয়ন ডলার।
৫. পোর্ট্রেট অব অ্যাডেল বøচ-বাউইর ১, গুস্তাভ ক্লিমট, ১৬৮.৮ মিলিয়ন ডলার : দি লেডি ইন গোল্ড নামের এই পেইন্টংটি ১৯৪১ সালে চুরি হয়ে যায়। ২০০৬ সালে বøচ-বাউইর পরিবার ফেরত পেলে সাথে সাথে এটি বিক্রি করে দেয়। ১৬৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হওয়া এই পেইন্টিংয়ের টাকার ১২৯ মিলিয়ন খরচ করলেই কেনা যেতো বিখ্যাত মেনশন পালাজ্জো ডি আমোর যেখানে রয়েছে স্পা, পুল, ভিনিয়ার্ড ও ঝর্ণা।
৪. পেনডান্ট পোর্ট্রেট’স অব মাইরটেন সুলমানস এন্ড ওপজেন কোপিট, রেমব্রেন্ট, ১৯১ মিলিয়ন : এই পোর্ট্রেটগুলো আঁকা হয় ১৬৩৪ সালে এবং ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস্ এগুলো ২০১৫ সালে কিনে নেয়। ১৯১ মিলিয়ন দিয়ে এগুলো না কিনে ১৯০ মিলিয়ন ডলারে স্কোরপিয়স আইল্যান্ড কেনা যেতো।
৩. নাফিয়া ফা ইপোইপো, পল গগিন, ২২৩ মিলিয়ন ডলার : এই পেইন্টিংয়ের অর্থ, ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’ ১৮৯২ সালে এটি আঁকা হয় এবং ধারণা করা হয় এটির দাম ৩০০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। যদিও ২২২ মিলিয়ন ডলারে ফুটবলার নেইমারকে কিনেছিলো প্যারিস সেন্ট-জার্মান ক্লাব।
২. দ্য কার্ড পে�য়ারস, পল সেজান, ২৮০ মিলিয়ন ডলার : কাতার সরকার ২০১১ সালে এই পেইন্টিং কিনে নিয়েছে ২৬০ ডলারে। অথচ এই টাকায় সহজেই হাওয়াই দ্বীপের ৩৫% কেনা যেতো!
১. সালভেটর মুন্ডি, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার : এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামী পেইন্টিং হিসেবে খ্যতি রয়েছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সালভাটর মুন্ডি। এটির দাম ধরা হয়েছে ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার। অথচ মোনাকোর ট্যুর ওডিওন পেন্ঠহাউস কিনতে ৩৩৫ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে!
মোনালিসা, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি : ইতালীয় শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৬ শতকে এই ছবিটি অঙ্কন করেন। ধারণা করা হয়, বিখ্যাত এই ছবিটি মোনা লিসার দ্বিতীয় পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ স্মরণে অঙ্কিত হয়। অনেক শিল্প-গবেষক রহস্যময় হাসির এই নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে সনাক্ত করেছেন।
শিল্পকর্মটি ফ্রান্সের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ল্যুভ জাদুঘরের তথ্যমতে প্রায় ৮০% পর্যটক শুধু মোনালিসার চিত্র টি দেখার জন্য আসেন। বিখ্যাত এই পেইন্টিংয়ের মূল্য ৮৫০ মিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে অনেক কিছুই কেনা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, নতুন সিয়াটল সেন্টার এরিনা প্রকল্পটি নির্মাণ করতে ৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।