আলোচনার জন্য ট্রাম্প অনির্ভরযোগ্য, বলছে ইরান
রাশিদ রিয়াজ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানি নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার আগ্রহের বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেছেন, আলোচনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নন এবং তার ওপর আস্থা রাখা যায় না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, আমি ইরানের ব্যাপারে যা দেখতে চাই তা হলো তারা (আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য) আমাকে টেলিফোন করছে। তিনি বলেন, আমি চাই ইরানি কর্মকর্তারা একটি ভালো চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা করতে আমাকে টেলিফোন করুক। এ ধরনের চুক্তি ইরানকে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সহযোগিতা করবে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ইরানিদের কাছ থেকে বেশি কিছু চান না, শুধু চান ইরানিরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করুক।
আর মার্কিন নিউজ চ্যানেল এনবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মাজিদ তাখতে রাভাঞ্চি বলেন, আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ব্যাখ্যা দিতে হবে তিনি কেন আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গেলেন? তিনি বলেন, ট্রাম্প এমন সময় আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গিয়েছিলেন যখন বিশ্ব শক্তিগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ওই টেবিলে বসে ছিল।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করার পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেন। পাশাপাশি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তার প্রশাসনের ইরান নীতি প্রত্যাখ্যান করে জন কেরি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ‘লোগান আইন’ লঙ্ঘন করছেন এবং এজন্য তার বিচার হতে পারে।
ট্রাম্পের এ বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জন কেরির একজন মুখপাত্র সিএনএন’কে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ যা কিছু বলেছেন তার সব ভুল এবং কল্পকাহিনী।
জন কেরি গত বছর এক বক্তব্যে বলেন, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে ‘তিন থেকে চারবার’ সাক্ষাৎ করেছেন এবং এসব সাক্ষাতে পরমাণু সমঝোতাসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৯৯ সালে অনুমোদিত লোগান আইনে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু ভাবাপন্ন কোনো দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের অনুমতি ছাড়া আলোচনা করাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেছেন, আবার আলোচনায় বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে উঠে যাবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়; বিশেষ করে তিনি যখন একের পর এক আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ ১৪টি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। এ ছাড়া, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এই অস্ত্র নিষিদ্ধ করে ফতোয়া জারি করেছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ইরানকে একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার পরামর্শ না দিয়ে ইউরোপের নিজের উচিত এ সমঝোতা মেনে চলা। জারিফ বলেন, পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে ইইউ’র বিবৃতি দেখে মনে হয়, ইরান কেন এর কিছু ধারা স্থগিত রাখল সেজন্য তারা বিস্মিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এক বছর ধরে ইউরোপসহ গোটা বিশ্বকে ভয় দেখিয়ে পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করে পায়ের তলায় পিষে ফেললেও ইইউ ‘দুঃখ প্রকাশ’ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। ইইউ’র নিজের উচিত ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সহ পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলা।
ইরাকের প্রভাবশালী আইন প্রণেতা হাসান সালিম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে ইসরাইল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। রিকনস্ট্রাকশন অ্যালায়েন্সের এই নেতা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ইরানের সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিউমার্স হায়দারি বলেছেন, অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ তার বাহিনী শত্রুর যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান