গড়াই সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণ আদায় সত্ত্বেও জনগণের কাছ থেকে এখনো চলছে টোল আদায়
মধ্যাঞ্চল প্রতিনিধি : ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কামারখালীতে গড়াই নদীর উপর অবস্থিত ‘গড়াই সেতু’। এ সেতুটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৯১ সালে। সেতুটি চালু হওয়ার পর গত ২৮ বছরে টোল আদায়ের মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণ খরচ বহু আগেই উঠে গেছে। কিন্তু তারপরও চলছে টোল আদায়। এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ওই সেতু দিয়ে যাতায়াতকারী দেশের বিভিন্ন জেলার গাড়ির চালকদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গড়াই সেতুটি ৬২২ মিটার দৈর্ঘ্যে বিশিষ্ট। ১৯৯১ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটির উদ্বোধন করেন। সেতুটির নির্মাণ খরচ হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা।
সর্বশেষ গত ১ জুলাই থেকে ৪৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪০ টাকার বিনিময়ে তিন বছরের জন্য এ সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স মোস্তফা নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তিন দফায় ফরিদপুর সড়ক বিভাগকে এই টাকা পরিশোধ করার কথা। ফরিদপুর সড়ক বিভাগ এই পর্যন্ত ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮ কোটি টাকা পেয়েছে। এই ১৮ কোটি টাকাসহ এ সেতু থেকে এই পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ১৪৭ কোটি ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
নির্মাণ খরচ উঠে যাওয়ার পর ঢাকা-আরিচা সড়কের মানিকগঞ্জ জেরায় অবস্থিত কালীগঙ্গা নদীর উপর স্থাপিত ৬৬৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে তরা সেতুটি টোল মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারির রাত ১২টা থেকে ওই সেতুটির উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনকে আর টোল দিতে হচ্ছে না। এটি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারি প্রকৌশলী মতিউর রহমান।
পাশাপাশি গড়াই সেতুটির নির্মাণ খরচের প্রায় তিন গুণ টাকা ইতিমধ্যে উঠে এলেও এ সেতুটি টোলমুক্ত করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে এ সেতু দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং বাস ও ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতির ক্ষোভের শেষ নেই।
টেইলার (১২ চাকা বিশিষ্ট যানবাহন যা মূলত বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রেনের পাতসহ বিভিন্ন যানবাহন আনা নেওয়ায় ব্যবহৃত হয়।) থেকে শুরু করে ঠেলা গাড়ি পর্যন্ত এই সেতু পার হতে ৫৬৫ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত টোল দিতে হচ্ছে ।
২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে তিন বছরের জন্য টোল আদায়ের ইজারা পেয়েছে মেসার্স মোস্তফা নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টোল আদায়ের কাজে নিয়োজিত ব্যবস্থাপক কার্তিক দত্ত জানান, প্রতিদিন গড়ে এই সেতু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার যানবাহন চলাচল করে।
একই দায়িত্বে নিয়োজিত ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অপর ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন, এই টোল ঘর থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়।
ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী মাগুরার ড্রাম ট্রাক চালক নাসির হোসেন মোল�া জানান, তার ট্রাকটি মূলত বালু আনা নেওয়ার কাজ করে। এ কাজে প্রতিদিন ১০ বার ওই সেতুটি অতিক্রম করলে ১০ বারই টোল দিতে হয়। যা একটি বিরক্তিকর বিষয়।
ওই পথে চলাচলকারী ফরিদপুর সদরের মুন্সী বাজার এলাকার মাইক্রোবাস চালক মো. আয়নাল হোসেন বলেন, গত ২৮ বছর ধরে আমাদের এ সেতু পারাপারের জন্য টোল দিতে হচ্ছে। জানি না টোল দেওয়ার এ অবস্থা থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো।
ফরিদপুর বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম ভূইয়া বলেন, এ সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার বাস চলাচল করে। প্রতিদিন আসা ও যাওয়ার পথে আমাদের টোল দিতে হচ্ছে। টোলের এ টাকা আমার মালিকরা নিজেদের পকেট থেকে দেই না, যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করি। এ টোল দেওয়া বন্ধ হলে আমাদের চলাচলে সময় বাঁচবে, পাশাপাশি উপকৃত হবে যাত্রী সাধারণ।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ফাইজুল কবীর বলেন, ওই সেতু দিয়ে প্রতিবারের যাতায়তের জন্য টাকা দিতে হচ্ছে। একটি গাড়ি দিনে ১০বার আসা যাওয়া করলে ১০ বারই টাকা দিতে হচ্ছে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় উঠে গেলে টোল তুলে দেওয়া উচিত। কিন্তু গড়াই সেতুতে এখনো জনগণকে টোল দিতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, সড়ক বিভাগের উদ্যোগে গড়াই সেতুর টোল তোলা হলেও এ টাকা জমা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সরকারের আয়ের যে কয়টি উৎস আছে সেতুর টোল তার মধ্যে একটি। সেতুর নির্মাণ খরচ উঠে গেলে টোল তুলে নেওয়া হবে এ জাতীয় কোন নির্দেশনা নেই। টোল তোলা না তোলা বিষয়টি নির্ভর করে মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি তুলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানালে পর্যায়ক্রমে তার একটা ফল পাওয়া যেতে পারে।
জেলার মধুখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আজিজার রহমান মোল�া বলেন, আমরা আর কত বছর টোল দিবো। এর একটা শেষ থাকা দরকার। ফরিদপুরের গড়াই সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিন গুণ আদায় সত্ত্বেও চলছে টোল আদায়।