খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ প্রয়োজনে ‘জরুরি অবস্থা’র নির্দেশ হাইকোর্টের
নূর মোহাম্মদ : বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ পালন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল রোববার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এছাড়া যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ৫২টি পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পুনরায় উত্তীর্ণ না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এমনকি এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করতে বলেছেন আদালত। ৫২টি নিম্নমানের খাদ্যপণ্য দেশের বাজার থেকে জব্দ করতে এবং এসব প্রক্রিয়াজাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।
খাদ্য, বাণিজ্য, শিল্প সচিব, বিএসটিআইর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে বাজার থেকে ওইসব নি¤œমানের পণ্য প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে গত বৃহস্পতিবার এ রিট দায়ের করেন। ওইদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের দুই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে আদালতে হাজির হতে বলেন। সে অনুযায়ী গতকাল তারা আদালতে হাজির হন।
আদালত বলেন, উন্নত দেশের আইন পর্যালোচনা করে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন করেছে। এর চেয়ে ভালো আইন আর হতে পারে না। এতে প্রতিটি বিষয়কে স্পর্শ করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বে রেস্টুরেন্টে যারা খাবার সরবরাহ করে, তাদের ছোঁয়াচে রোগ আছে কিনা সেটাও নিশ্চিত হয় তারা। হয়তো আমরা তাদের পর্যায়ে যেতে পারবো না, সে ধরনের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও নেই। কিন্ত আইনে যা আছে, তার মধ্যে মিনিমাম একটা মান তো নিশ্চিত করতে হবে।
আইনজীবী শিহাবউদ্দিন বলেন, ক্ষমতা থাকার পরেও ৫২ পণ্য বাজারে আছে। কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি। আদালত বলেন, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কোম্পানিগুলো দাবি করে তাদের পণ্য সেরা। কিন্তু রিপোর্টে কি বেরিয়ে আসলো। আর ভেজাল খাদ্যের কারণে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
আদালত বলেন, বিএসটিআই কোনো অ্যাকশনে যেতে পারবে? ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান বলেন, এদের ক্ষমতা রয়েছে লাইসেন্স বাতিল ও কারাখানা বন্ধ করে দেয়ার। বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ৫২ পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা নেই। তবে সার্ভিল্যান্স টিমের বাজার থেকে পণ্য প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।
এসময় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিষয়ে আদালত বলেন, আইনে সব ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু আপনারা তা পালন করছে না। বিএসটিআই যখন বলেছে নি¤œমানের, তখনইতো এসব নিষিদ্ধ। একজন মানুষ খুন হলে পুলিশ কি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার জন্য অপেক্ষা করে আসামি ধরতে? বিএসটিআই বলেছে নি¤œ মানের, আর আপনারা বলছেন রিপোর্ট আসার জন্য অপেক্ষা করছেন, এটা কোনো কথা হলো?
আইনজীবী বলেন, যে কর্মকর্তা এসেছেন তিনি এক সপ্তাহ আগে যোগদান করেছে। আদালত বলেন, তিনি নতুন, কিছুই তো জানে না। আমরা তাহলে ডিজিকে তলব করি। ডাকলে তো বলবে ডেকে নিয়ে অপমান করা হয়। এসব ফাজলামোর কারণে অপমান করবে না? এগুলো কোর্টের সঙ্গে ফাজলামো। ১/২ মাস কাজ করেছে এরকম লোক কি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিসে নেই?
পরে মাদকের মতো খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হাইকোর্ট। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাজের অগ্রাধিকার কী হবে, তা হাইকোর্ট নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল রোধের বিষয়টিকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দেয়ার অনুরোধ জানানো হলো। শুধু রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযান কাম্য নয়, সারা বছর চলা উচিত।
আদালত বলেন, খাদ্য নিরাপদকরণের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন শুধু কর্মকর্তা হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক হিসেবে জনগণের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। একটি সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াসার পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি নিশ্চিতের জন্যও বলেছেন আদালত। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান