জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে পারলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও ধনী রাষ্ট্র হবে বলে মনে করেন ড. আবুল বারকাত
জুয়েল খান : শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে সেই বিনিয়োগ শুধু বাজেটে বাড়ালেই হবে না। স্থায়ী ভিত্তিতে বাড়তে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, মাধাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে, এই ধারণার সঙ্গে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু সমস্যাটা হবে অন্য জায়গাতে, আয় বৈষম্য এবং সম্পদ বৈষম্য। শিক্ষা ক্ষেত্রে টেকসই বিনিয়োগ বাড়ালে তার ফল পেতে কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগবে। তবে স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগের ফল হয়তো কিছুটা তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে একজন ব্যক্তির নিজের টাকা থেকে ৭০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেন, তবে ক্যান্সার বা বড় ধরনের রোগ হলে সেই ব্যয় ৯০ শতাংশও হতে পারে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে যাতে ব্যক্তি খাতে চিকিৎসা খরচ কমে রাষ্ট্রীয় খাতে বাড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে যে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ধনী হবে। তবে তারা কয়েকটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যে, ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকা এশিয়ায় পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে। জনসংখ্যাকে জনসম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আমাদের সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। বাড়তি জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে পারলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও ধনী রাষ্ট্র হবে। তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে তিনশো ডলার বেশি হবে, তবে তাদের গবেষণায় এক থিওরিতে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রবৃদ্ধি বাড়লেই সব সমস্যা সমাধান হয়। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, প্রবৃদ্ধি বাড়লে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে আর বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। বৈষম্য, অপরাধ প্রবণতা কমবে এবং এগুলোর ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক স্থিতীশিলতা তৈরি হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা নির্ভর করবে সেই পলিসির অর্থনৈতিক প্রভাবের উপরে। সুতরাং পলিসিটা ইতিবাচক হতে হবে। প্রত্যেকটা সূচকের সঙ্গেই আয় বৈষম্য এবং সম্পদ বৈষম্য কমাতে হবে তাহলে অপরাধ এবং অপরাধ সংশ্লিষ্ট যতো প্রবণতা আছে সেটা কমবে। বড় বড় বিনিয়োগের পরিবেশগত প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে। যেমন : বড় শিল্প কারখানা করার পরে বর্জ্যরে কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা বাড়বে তখন সরকারকে স্বাস্থ্য ক্ষাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। তবে দেশের ভেতরে সকল প্রকার বৈষম্য কমাতে পারলে একটা সময় বাংলাদেশ স্থিতিশীল একটা জায়গায় পৌঁছবে।