ড. জাহিদ হোসেন বললেন, পুঁজিবাজারের সংকট দূর করতে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে দেয়া তথ্যের বিশ^াসযোগ্যতা বাড়াতে হবে
আমিরুল ইসলাম : ২০১০ সালের পর থেকে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত সে সংকট দূর হচ্ছে না। পুঁজিবাজারের সংকট কাটাতে করণীয় কি? জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, পুঁজিবাজারের সংকট দূর করতে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে দেয়া তথ্যের বিশ^াসযোগ্যতা বাড়াতে হবে।
আমাদের অর্থনীতিকে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব শেয়ারহোল্ডার বা কোম্পানিগুলো লিস্টেড আছে, প্রতিদিন যে বাণিজ্য হয় বা মূল্য ওঠানামা করে এখানে স্বচ্ছতার অভাব, তথ্যের অভাব রয়েছে যার ফলে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী যারা পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হয় তারা অনেক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেন। তারা কোনো চিন্তাভাবনা না করে সবাই যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে দৌড়াচ্ছে। শেয়ারটা ক্রয় করে তাদের পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব হবে কিনা তারা এ নিয়ে চিন্তাভাবনা না করে শেয়ার ক্রয় করে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা কি, তারা যেসব ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টগুলো প্রকাশ করে, এখানে যেসব তথ্য দেয়া হয়, তাদের আয়-ব্যয় মুনাফা ও সম্পদ সম্পর্কে এসব তথ্যের বিশ^াসযোগ্যতা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটা করা হয়েছে। তাদের মূল দায়িত্ব যে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শেয়ার বাজারের সঙ্গে জড়িত আছে সেগুলো নিরীক্ষা করা। নিরীক্ষাকারীরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের। সেগুলো এখনো কার্যকর হয়নি। শেয়ারবাজারে সুশাসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে হলে রেগুলেশন ঠিক করতে হবে। শেয়ার বাজারের রেগুলেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোম্পানি সম্পর্কে যে তথ্যগুলো বাজারে দেয়া হচ্ছে এগুলো ঠিক কিনা, বিশ^াসযোগ্য কিনা। স্বচ্ছতা আছে কিনা।
তিনি আরো বলেন, নতুন আইপিএগুলো যখন বাজারে ছাড়ছে তখন যে মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে সে কোম্পানিটা আসলে এ মূল্য পাওয়ার যোগ্য কিনা, সেটা মূল্যায়ন করার একটা ভিত্তি থাকতে হবে। এই ভিত্তিটা হলো ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টগুলো। তথ্যগুলো যদি নির্ভরশীল হয় তাহলে মূল্যায়নটা বিনিয়োগকারীর উপর ছেড়ে দেয়া যায়। কিন্তু আমরা যেটা দেখতে পাই এখানে তথ্যেই অনেক ফাঁকি থাকে। সোনালী ব্যাংকের এতো খেলাপি ঋণ থাকা সত্ত্বেও তারা অনেক টাকা মুনাফা দেখায়। যে কোম্পানিগুলো আছে এবং নতুন যে কোম্পানিগুলো আসছে সেগুলো বাস্তবে আছে কিনা দেখতে হবে। এ ধরনের ভাঁওতাবাজি বন্ধ না করলে মানুষজন শেয়ারবাজারের উপর আস্থা রাখতে পারবে না। মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র অথবা ডিপোজিটের পেছনে দৌড়ায় নয়তো জমি ক্রয় করে। শেয়ারবাজারের সংকট কাটাতে হলে জনগণের আস্থা ফেরত আনতে হবে। বড় কোম্পানিগুলো নিয়ে আসার জন্য কর সুবিধা দেয়া হলেও তারা আসছে না। বন্ড মার্কেট বলতে আমাদের এখন কিছু নেই। একটা দীর্ঘমেয়াদি বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে বড় কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে আসতো। শেয়ারবাজারের প্রাথমিক কাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে বড় কোম্পানি আসবে না।