ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বললেন কৃষিবিদ ড. মতিয়ার রহমান
জুয়েল খান : সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে যারা কৃষি উপকরণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের কাছ থেকে কৃষক কৃষি উৎপাদনের জন্য বাকিতে বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে থাকে যেমন : সার, বীজ, কীটনাশক ও পরামর্শ সাহয়তা। ধান ওঠার পর কৃষক টাকা পরিশোধ করার কথা বলা থাকে। যার ফলে কৃষক এদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে যায়। আবার সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে হলে ধান যে পরিমাণ শুকানো প্রয়োজন সেটা করা কৃষকের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন কৃষিবিদ ড. মতিয়ার রহমান।
সরকারের কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়াটা অনেক জটিল। বিশেষ করে ধানের ময়লা, চিটা এবং যে পরিমাণে ধান শুকাতে হয় একজন কৃষকের পক্ষে আদৌ এতো ধান শুকানো সম্ভব নয়। কারণ ধান শুকাতে হলে পর্যাপ্ত জায়গা, চাতাল এবং সময়ের প্রয়োজন। কৃষকের হাতে টাকা নেই তাই সে ধানটা বিক্রি করে টাকা দিয়ে লেবারের দাম পরিশোধ করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই ধান বাড়িতে রেখে শুকিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে একজন কৃষকের দ্বারা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব? তারপর কোনো কৃষক যদিও ধান শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে খাদ্য অধিদপ্তরে বিক্রির জন্য নিয়ে যান তখন শুরু হয় ধানের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন যদি এই পরীক্ষায় না টেকে তাহলে ওই ধান ফেরত পাঠাবে খাদ্য অধিদপ্তর এবং কৃষককে নিজের খরচে ধান ফেরত নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, ধান কেনার সময় কৃষি অফিস থেকে লিখিত নিয়ে সেই কাগজ খাদ্য অধিদপ্তরে দেখাতে হয়, তারপরে খাদ্য অধিদপ্তরে সেই ধানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যার ফলে বাড়তি ঝামেলার জন্য কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারে না। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করছে। উপজেলা কৃষি অফিসে যে সিন্ডিকেট আছে তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে এই জায়গায় সরকারকে নজর দিতে হবে। এছাড়া সরকার অনেক সময় মিলারদের কাছ থেকে ধান এবং চাল ক্রয় করে থাকে। মিলারদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। এতে মিলাররা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে সরকারের কাছে বেশি দামে ধান বিক্রি করে থাকে।
সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই একজন কৃষকের পক্ষে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই সরকার যদি প্রকৃতই কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় করতে চায় তাহলে শর্ত কমিয়ে দিতে হবে। যেখানে সরকার এক হাজার চল্লিশ টাকা ধানের দাম নির্ধারণ করেছে সেখানে নয়শো টাকা করা যেতে পারে এতে শর্ত কমিয়ে দিলে কৃষক সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবে এবং ভালো দাম পাবে।