বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেব, বললেন মোদী তোমারটা থোড়াই নেব, পাল্টা জবাব মমতার
জিয়ারুল হক : মোদী বলেন, ‘যেখানে তৃণমূল মূর্তি ভেঙেছে, সেখানে আমাদের সরকার পঞ্চধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেবে বিদ্যাসাগরের।’
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি। মঙ্গলবারের সেই ঘটনার পর বুধবার রাজ্যে এসেও কার্যত মৌনই ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অবশেষে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। মূর্তি ভাঙার দায় তৃণমূলের দিকে ঠেলে দিয়ে মোদীর আশ্বাস, ওই জায়গাতেই বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বসানো হবে। যে তৃণমূলের গুন্ডারা মূর্তি ভেঙেছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত, বলেছেন মোদী। একই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাল্টা এ দিন মথুরাপুরের সভা থেকে মোদীর এই মূর্তি গড়ে দেয়া প্রসঙ্গে পাল্টা তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা তোপ, ‘আপনার কাছ থেকে আমরা ভিক্ষা নেব না।’ সূত্র : আনন্দবাজার
মঙ্গলবার শহর কলকাতায় অমিত শাহের রোড শো ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল কলেজ স্ট্রিট এবং বিদ্যাসাগর কলেজে। ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি, বাইক-সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিদ্যাসাগর কলেজে ভেঙে দেওয়া হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। ঘটনার পরের দিন বুধবার রাজ্যে এসে টাকি এবং ডায়মন্ড হারবারে দু’টি নির্বাচনী জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দু’টি সভার কোথাও মূর্তি ভাঙা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি।
অবশেষে মুখ খুললেন বৃহস্পতিবার। এ দিন উত্তরপ্রদেশের ঘোসি লোকসভার অন্তর্গত মউ এলাকায় একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন মোদী। সেখানেই একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন তিনি। অমিত শাহের রোড শোয়ে তৃণমূল হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং মূর্তিও তৃণমূলই ভেঙেছে বলে অভিযোগ তোলেন মোদী। বাংলা তথা দেশে বিদ্যাসাগরের অবদান ব্যাখ্যা করে মোদী বলেন, ‘যেখানে তৃণমূল মূর্তি ভেঙেছে, সেখানে আমাদের সরকার পঞ্চধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেবে বিদ্যাসাগরের।’
লোকসভা ভোটের পারদ চড়তেই সারা দেশে বিরোধীরা একজোট হওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-অখিলেশ, অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নায়ডু, দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়াল, জম্মু কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো দলের নেতারা প্রায় এক ছাতার তলায় এসেছেন বিজেপি-বিরোধী জোট গড়তে। এই প্রসঙ্গেই মায়াবতী-মমতাকে এক পংক্তিতে বসিয়ে মোদীর খোঁচা, ‘এখানে আসার সময়ে শুনলাম বহেন মায়াবতীজি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছেন। ওখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বিহারের এবং উত্তরপ্রদেশের লোকজনকে বহিরাগত বলে চিহ্নিত করছেন, আমি ভেবেছিলাম বহেনজি তার নিন্দা করবেন।’
লোকসভা ভোটপর্বে একাধিক বার এ রাজ্যে ভোট প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর একাধিক সভায় বিশৃঙ্খলা এবং অশান্তির চেষ্টা করেছে তৃণমুল, অভিযোগ মোদীর। মেদিনীপুর, ঠাকুরনগর, কোচবিহার-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে তাঁর কর্মসূচি কী ভাবে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তা নিয়েও মমতাকে নিশানা করেছেন মোদী। কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘কলকাতা আর দমদমে আজ আমার সভা আছে। দেখি দিদি আমার সভা হতে দেন কি না।ওর পক্ষে সম্ভব হলে আমার হেলিকপ্টার নামাও উনি আটকে দিতেন।’ অমিত শাহের রোড শোয়ে হামলার তীব্র নিন্দাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সাইক্লোন ফণীর পর এ রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু মমতা বৈঠকে রাজি হননি। তার পর একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রীই মানেন না তিনি। কারণ তাঁর মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে মোদী এ রাজ্যে এসে বার বার মমতাকে কটাক্ষ করেছেন। মউয়ের সভাতেও মোদীর গলায় সেই সুর, ‘বাংলার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মানেন, কিন্তু ভারতের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে মানেন না।’