আবার অস্থিতিশীল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার
শাহীন চৌধুরী: অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য এখন নিম্নমূখী হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অন্তত তাই বলছে। পণ্যটির সার্বিক বাজার উপাদানগুলো এ মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধির পুরোপুরি প্রতিকূলে। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের। আর বাজারের এ অস্বাভাবিক ও কিছুটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পেছনে দায়ী করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ভেনিজুয়েলাসহ বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক সংকটকে। খবর মার্কেট ওয়াচ।
কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের উত্তোলন ও সরবরাহ বেড়েছে। উপরন্তু বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটিতে পণ্যটির চাহিদায়ও দেখা যাচ্ছে কিছুটা মন্দাভাব। এরই মধ্যে চলতি বছর বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য চাহিদা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। সব মিলিয়ে বলা চলে, বাজারের স্বাভাবিক উপাদানগুলো এ মুহূর্তে পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির পুরোপুরি প্রতিকূলে।
তবুও দাম বাড়ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের। মূল্য পরিস্থিতিরৃ এ অস্বাভাবিক আচরণের পেছনে মূলত বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক সংকটকেই দায়ী করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পণ্যবাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক ভিত্তিক ইনফর্মা ইকোনমিকসের জ্বালানি বাজার বিশ্লেষক মার্শাল স্টিভস জানান, পারস্য উপসাগর থেকে শুরু করে ভেনেজুয়েলা পর্যন্ত ভূরাজনৈতিক নানা সংকটে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ শঙ্কার কারণেই বাজারে পণ্যটির মূল্য এখন উর্ধ্বমুখী। জ্বালানি তেলের এ উচ্চমূল্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি কিছুটা হুমকিও বটে।
আইসিই ফিউচার্স ইউরোপে (আইসিই) বুধবার জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম বেড়েছে ব্যারেলে ৫৩ সেন্ট। জুলাইয়ে সরবরাহ চুক্তিতে এদিন পণ্যটির বাজার স্থির হয় প্রতি ব্যারেল ৭১ ডলার ৭৭ সেন্ট মূল্যে। দিনব্যাপী লেনদেনে মোট দরবৃদ্ধির হার দশমিক ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে এদিন মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ বা ব্যারেলে ২৪ সেন্ট। এদিন এখানে পণ্যটির বাজার স্থির হয় প্রতি ব্যারেল ৬২ ডলার ২ সেন্টে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ১০ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেড়েছে ৫৪ লাখ ব্যারেল। যদিও এ সময় পণ্যটির সরবরাহ কমবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা।
পণ্যবাজার উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্কভিত্তিক টাইমকে ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজার্সের ব্যবস্থাপনা সদস্য তারিক জহির বলেন, সবার প্রত্যাশা ছিল সরবরাহ কমবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সবখান থেকেই সরবরাহ বেড়েছে। অপ্রত্যাশিত এ সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে পণ্যটির মূল্য কমাটাই স্বাভাবিক ছিল। বিশেষ করে যখন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপিত পরিমাণ কমিয়ে এনেছে।
আইইএর সর্বশেষ মাসিক প্রতিবেদনে চলতি বছরে জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে ৯০ হাজার ব্যারেল করে। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যটির দৈনিক গড় চাহিদা প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১৩ লাখ ব্যারেলে। তারপরও মূলত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়তির দিকে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা। সম্পাদনা : ইকবাল খান