চাহিদা ৩৫ কোটি থাকলেও দেশে উৎপাদন হয় ১০ কোটিরও কম নারিকেল
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রায় ৩৫ কোটি নারিকেল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হয় ১০ কোটিরও অনেক কম নারিকেল। যা দিয়ে চাহিদার সামান্যই মিটানো যায়। বাকিটা আমদানীতেই মেটাতে হয়। তার ওপর মাইট নামের মাকড়ের আক্রমণসহ নানা সমস্যার মুখে দেশে আগের চেয়েও কমেছে নারিকেল চাষের জমি ও উৎপাদন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং এর হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন নারিকেল উৎপাদন হয়। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ মেট্রিক টন নারিকেল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের ৫০ হাজার ৯৭১ হেক্টর জমিতে নারিকেল চাষে উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টন।
কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশে উৎপাদিত নারিকেলের ৪০ শতাংশ ডাব হিসেবে ও ৪৫ শতাংশ ঝুনা নারিকেল হিসেবে খাওয়া হয়, ৯ শতাংশ দিয়ে তেল তৈরি এবং অবশিষ্ট ৬ শতাংশ হতে চারা করা হয়। সারা বিশ্বে নারিকেল উৎপাদন হয় তেল তৈরিতে আর বাংলাদেশে নারিকেল চাষ হয় ফল ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য। পানীয় বা শাঁস যেভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন তাতে নারকেলের মাত্র ৩৫ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে। বাকি ৬৫ শতাংশ (মালা, ছোবড়া ও পানি) অব্যবহৃতই থেকে যায়। অথচ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এর খোসা, মালা ও পানি থেকে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি উপার্জন করা সম্ভব।
খাদ্য বা পানীয় হিসেবে আমরা অর্থকরী ফল ও তেলজাতীয় ফসল নারিকেলের যে শাঁস ব্যবহার করি তা পুরো নারিকেলের ৩৫ শতাংশ মাত্র। বাকি ৬৫ ভাগ খোসা ও মালা। নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম, অ্যাক্টিভেটেট কাঠ কয়লা, বাটি, খেলনা, কুটির শিল্প, চামচ ও খোসা থেকে আঁশ এবং আঁশজাত দ্রব্য দড়ি, মাদুর ইত্যাদি তৈরি হয়। দড়ি তৈরির সময় খোসা থেকে যে তুষ বের হয় তা পচিয়ে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরি করা যায়। যশোর ও বাগেরহাট অঞ্চলে নারিকেল খোসার আঁশ ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে সাদা করে বিদেশে রফতানি করা হয়। তাছাড়া গ্লিসারিন, সাবান ও কেশ তেল তৈরিতে নারিকেল ব্যবহৃত হয়। ইদানিং গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভোজ্যতেল হিসেবেও নারিকেল তেল উৎকৃষ্ট। নারিকেলের চোবড়ার ঝুরা দিয়ে তৈরি উৎকৃষ্টমানের সামগ্রী বীজ চারা উৎপাদন মিডিয়া হিসেবে নার্সারির বেডে ব্যবহৃত হয়।