ধানের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করতেই হবে
মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান
কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য সংগ্রহমূল্য পেতে হলে প্রতিবাদের কোনো বিকল্প নেই। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একক বা সংঘবদ্ধভাবে সরকারের নিকট স্মারকলিপি বা প্রতিবাদলিপি পেশ করি বা আবার কখনও ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে থাকি। কিন্তু এসবের মানে কি? কেনই বা স্মারকলিপি, কেনই বা প্রতিবাদলিপি আবার কেনই বা ক্ষোভ ও নিন্দা।
স্মারকলিপি পেশ : যখন কোনো ব্যক্তি, গোষ্টী, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন জনগণের উপর সরকারের গৃহীত বা গৃহীতব্য কোনো সিদ্ধান্ত সমর্থন করে বা নিজেদের সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে তখন সাধারণত ওই বিষয়ে সরকারের নিকট স্বারকলিপি পেশ করা হয়। জনস্বার্থে বাজেট বরাদ্ধ বা খাত বহির্ভূতভাবেও সরকারি অর্থ ব্যয় করতে বা প্রয়োজনে যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে উক্ত বিষয়ে স্মারকলিপি পেশ করে সরকারকে সমর্থন যোগায়। স্মারকলিপিতে সরকারের গৃহীত বা গৃহীতব্য সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ মেনে নিয়ে তা বর্ধন বা পরিমার্জন বা পরিবর্তন করার বিভিন্ন সুপারিশমালা পেশ করা হয়ে থাকে। এই জন্য সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে এবং এর উপরে সরকার কখনো কখনো সিদ্ধান্ত নেয়। বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের তাই স্মারকলিপি পেশ করার কোনো যুক্তিকতা নেই বা থাকে না।
প্রতিবাদলিপি পেশ : যখন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন জনগণের উপর সরকারের গৃহীত বা গ্রহীতব্য বা জনগণের কল্যাণে ও স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের অনিহা বা ব্যর্থতার জন্য নিজেদের প্রতিবাদ প্রকাশ ও বিকল্প কর্মসূচি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব আকারে প্রকাশ ও পেশ করা হয় এবং তা মেনে নেয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় তখন তাকে সাধারণত প্রতিবাদলিপি বলা হয়। প্রতিবাদলিপির মূলত দুইটি অংশ, প্রথমটি হলো- সরকারের গৃহীত বা গৃহীতব্য সকল সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান এবং দ্বিতীয়ত হলো জনগণের কল্যাণে ও স্বার্থে বিকল্প কর্মসূচি বা সিদ্ধান্তের প্রস্তাব। প্রতিবাদলিপি সরকারকে তার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য করে, ব্যর্থতার দায়ভার নির্ধারণ করে, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির যৌক্তিকতা নির্ধারণ করে, যদি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের জানমালের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হয় তাহলে তার দায়ভার সরকারের উপর বর্তায়, ইত্যাদি। তাই সরকার কখনই প্রতিবাদলিপি গ্রহণ করে না এবং দিতে আসতে সর্বাত্মক বাঁধা প্রদান করে। যেকোনো প্রতিবাদলিপি সরকারকে গ্রহণ করতে বাধ্য করাই বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সফলতা। তাই প্রতিবাদলিপি পেশে জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিবাদলিপি পুলিশের বুটের নিচে রাজপথে পিষে যাবে।
ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ : সরকারের গৃহীত বা গৃহীতব্য যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন ক্ষোভ বা নিন্দা জানাতে পারে যার জন্য তারা সংঘবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে আসতে পারে। সাধারণত যে সকল ইস্যুতে নিজেদের কোনো কর্মসূচি বা পদক্ষেপ নাই বা এসকল ইস্যুতে সরকার বা অন্য কারো সিদ্ধান্তও কাম্য নয় এমন সব ইস্যুতেই সাধারণত ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। সরকার কোনো অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নিলে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। এখানে কোনো কিছু পেশ করা হয় না। সাধারণত ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে তেমন কোনো বাঁধা সৃষ্টি করে না। কারণ ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশে সরকারের গৃহীত বা গৃহীতব্য কর্মসূচিতে ছোট খাট ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়া ছাড়া তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে না। তবে যদি সে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রতিবাদে রূপ নেয় তা হলে আলাদা কথা।
সরকার পরিষ্কার বলে দিয়েছে ধানের সংগ্রহ মূল্য বাড়াবে না এবং বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করবে না। সরকার তার অবস্থানে পরিষ্কার। এখন বিরোধী রাজনীতিবিদরা যদি সরকারের পদক্ষেপ যথোপযুক্ত নয় বলে মনে করে তাহলে তারা তাদের যার যার মতো করে, যেমন সিপিবি করছে বা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে এবং সরকারের নিকট পেশ করবে। এটিই তো রাজনৈতিক দলের অন্যতম কাজ। সরকারের জনবিরোধী, অকল্যাণ ও স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারাইতো বিরোধী দলের রাজনৈতিক শক্তি। ধানের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি কৃষকের ন্যায্য দাবি। এই দাবি নিয়ে যদি কোনো রাজনৈতিক দল কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে না যায় তাহলে তা কখনোই ইতিবাচকভাবে জনগণ দেখবে না। সময় এসছে। সবাই কৃষকের পাশে দাঁড়াও। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
লেখক : একজন কৃষক। ফেসবুক থেকে