২০১৮ সালে বিশ্বে হিমায়িত খাদ্যের বাজার ছিলো ২১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার
নূর মাজিদ : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা বিষয়ক বাণিজ্যিক তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট মার্কেট অ্যান্ড রিসার্চ বলছে, ২০১৮ সাল থেকেই ৫ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়ছে হিমায়িত খাদ্যের বৈশ্বিক বাজার। যা ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে। ওই সময়ে বাজারটির আকার হবে প্রায় ২৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের খুচরা খাদ্যপণ্যের বিক্রি বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। বিশেষ করে, বিশ্বের নানা দেশে খুচরা বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুপার মার্কেট, হাইপার মার্কেট এবং কনভেন্স স্টোরগুলোর মাধ্যমে আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ধরণের বিজনেস চেইনগুলো হিমায়িত খাদ্যের বড় বিক্রেতা। তাদের দেয়া বিশেষ মূল্যছাড় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ভোগব্যয় বৃদ্ধির নেপথ্যে প্রণোদনা দিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং কর্মজীবী নারীদের বর্ধিত সংখ্যা এই ভোক্তা ব্যয়বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।
বিশ্ববাজারে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। প্রতিবছরই এই বাজারটির আকার আরো বড় হচ্ছে। ফলে বিদেশের বাজারে দেশীয় কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। অন্যদিকে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এই রপ্তানি বৃদ্ধি ইতিবাচক গতি সঞ্চার করবে। দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা এমনটাই মনে করছেন।
এদিকে এই বাজারের খুব সামান্য অংশেই বাংলাদেশ অবদান রাখছে। যার মধ্যে আবার সিংহভাগ রপ্তানি আয় আসে হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে। বিএফএফআই বা বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড ফুডস এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যানুসারে ২০১৬-১৭ সালে মোট ৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা বা ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি রপ্তানি করা হয়। এই বিষয়ে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও সরকারি প্রণোদনা এবং বেসরকারি বিনিয়োগের স্বল্পতা মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ফ্রূটস-ভেজিটেবল অ্যান্ড এলায়েড প্রডাক্টস এক্সপোর্টাস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গির বলেন, বর্তমানে দেশ থেকে সকল ধরনের হিমায়িত মাছ চিংড়িসহ, ফল ও শাকসবজি বিদেশের বাজারে রপ্তানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার বাজারেই সিংহভাগ রপ্তানি করা হচ্ছে।
দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অর্থনীতি অনুষদের সিনিয়র প্রফেসর ডক্টর আবুল বারাকাত বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে একথা সত্য। তবে এক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। দেশের হিমায়িত খাদ্যশিল্পের উৎপাদন ও মান-নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজন বিপুল অংকের বিনিয়োগ। এটা সরকার একা করতে পারেনা। এইক্ষেত্রে দেশী এবং বিদেশী উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক আগ্রহ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। পুঁজিবাজার থেকে এইক্ষেত্রে প্রথম দিকেই বিপুল বিনিয়োগ আশা করা অনুচিত। কারণ, লগ্নিকারীরা শুধুমাত্র পরীক্ষিত খাতেই পুঁজিনিবেশ করতে চান। বর্তমানে আমরা হিমায়েত খাদ্যের বিশ্ববাজারে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখছি। এখানে ১ শতাংশ বাজার হিস্যা ধরতে হলেই, রপ্তানির পরিমাণ ৫ গুণ বাড়াতে হবে।’
ড. বারাকাত আরো বলেন, ‘ব্লু-ইকোনমি বা গভীর সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশও প্রত্যাশিত গতিতে হচ্ছেনা। ফল সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রত্যাশিত পরিমাণে মাছ আহরণ এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এইক্ষেত্রে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরকারের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, মিঠাপানির মাছ চাষে অ্যাকুয়া কালচারের উন্নয়ন প্রয়োজন। এখানে মাছের মান এবং জাত উন্নয়নে গবেষণাখাতে বিনিয়োগ করতে হবে। এটি রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিতকরনের পাশাপাশি দেশের অপুষ্টি সমস্যা দূর করতেও অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড অ্যাকুয়া কালচারের মাধ্যমে মিঠাপানির হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে বিশেষ সফলতা অর্জন করেছে।’ সম্পাদনা : ইকবাল খান