চাষিরা ধান চাষ করে বিঘা প্রতি লোকসান দিয়েছেন ৮ হাজার ৫৬০ টাকা খরচের হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে অঞ্চলভিত্তিক ধানের দাম
মতিনুজ্জামান মিটু : সরকার সারা দেশ থেকে একই দামে ধান কিনছে। এই বিষয়ে মন্তব্য করে চাষি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় একই রকম খরচ হয় না। অঞ্চলভিত্তিক এই খরচের হেরফের হয়ে থাকে। অথচ সব এলাকা থেকে ধান কেনা হচ্ছে একই (মণপ্রতি ১০৪০ টাকা) দামে। উপজেলাওয়ারী উৎপাদনের খরচ হিসেব করে ধানের দাম নির্ধারণ করা দরকার। দেশের উত্তরাঞ্চল আর দক্ষিণাঞ্চলের ধান উৎপাদনের খরচ এক নয়। মনিরামপুরসহ যশোর অঞ্চলে বিঘা (৩৩ শতাংশ) প্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার ৬৬০ টাকা। ধান হয়েছে গড়ে ২০ মণ (৪০ কেজি)। এখানকার চাষীদের মণপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১২৮৩ টাকা। আর সরকার ধান কিনছে ১০৪০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে ধান বেচতে পারলেও এই অঞ্চলের চাষিদের মণ প্রতি ধানে ২৪৩ টাকা করে লোকসান গুণতে হবে। এর মধ্যে এক বিঘা জমির ২ কাহন বিচালি বা খড় ১৫০০ টাকায় বেচে লোকসানের পরিমাণ সামান্য কমে হবে ১২০৮ টাকা।
এই অঞ্চলে এক বিঘা জমিতে ধান চাষে মোট ২৫৬৬০ টাকার মধ্যে পাতো কেনা বাবদ ২০০০ টাকা, জমি চাষের জন্য ১২০০ টাকা, জমিতে চারা রোপণ ১২০০ টাকা, পানি দেয়া ৩৫০০ টাকা, জমিতে তিন বার ৫০ কেজি ইউরিয়া সার দেয়া ৮৫০ টাকা, ২ বার ৩০ কেজি টিএসপি দেয়া ৭৫০ টাকা, পটাশ ২ বার ৩০ কেজি ৫০০ টাকা, ড্যাব সার ২০ কেজির এক বস্তা ৬০০ টাকা, দস্তা ২ কেজি এক বার ৩৬০ টাকা, কীটনাশক তিন বার ১৫০০ টাকা, আগাছা পরিষ্কার ১০০০ টাকা, ধান কাটা ও বাঁধা বাবদ ৩০০০ টাকা, ক্ষেত থেকে ধান বাড়িতে নেয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া ৭০০ টাকা, ধান ঝাড়া বাবদ ১৫০০ টাকা ও এক ফসলের জন্য নেয়া জমির লিজ বাবদ ৭০০০ টাকা খরচ হয়।
জমিতে ধান হয় মোট ২০ মণ। এখানকার জমিতে ব্রি ২৮ ও চিকন মিনিকেট ধান লাগানো হয়। স্থানীয় হাটে মণপ্রতি যা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৭৮০ টাকায়। এতে এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে কৃষকরা পেয়েছে ১৫৬০০ টাকা। আর ২ কাহন বিচালি বিক্রি করে পাওয়া গেছে ১৫০০ টাকা। এই হিসেবে এখানকার চাষিরা বিঘা প্রতি ধান চাষ করে লোকসান দিয়েছে ৮৫৬০ টাকা।