উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা রক্ষা করছি, বললেন প্রধানমন্ত্রী
ফাতেমা আহমেদ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সারাদেশে উন্নয়নের মাধ্যমে তা রক্ষা করছি। সারাদেশে ব্রিজ, কালভার্ট, ওভারপাস, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, যেখানে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সব করে দিচ্ছি। দেশের মানুষ যেন যাতায়াতে কষ্ট না পায় সে জন্যই আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।’ জাগো নিউজ, বাংলানিউজ, বাংলা ট্রিবিউন, সারাবাংলা
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আজকে আমি মনে করছি, ঈদের আগে আমরা যে কাজগুলি করলাম, এটা দেশবাসীর জন্য ঈদ উপহার হিসাবে ঘোষণা করছি। এটা আমি ঈদের উপহার দিলাম। ঈদের সময় সকলের বাড়ি যেতে-আসতে অনেক সহজ হবে।’
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস উদ্বোধন শেষে এ কথ বলেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করা হয়। এরপর ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী একইভাবে পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ উদ্বোধনকালে তার সরকারের ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগামী পর্যটন ট্রেন চালুর উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানা। তিনি বলেন ‘আমরা মনে করি, যেহেতু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে কাজেই আমরা ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি দ্রুতগামী ট্রেন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হব।’
মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জ তো তাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এমন মুন্সিয়ানা দেখাল, যাই করি না কেন সব মুন্সিগঞ্জে। এখন আমার পদ্মাসেতুও মুন্সিগঞ্জে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে কুমিল্লা কালেকটরেটর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহানের বক্তব্যে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা যেটুকু কাজ করে যাচ্ছি, এটা তো তোমাদের জন্য। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, ভাল জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের যোগাযোগ নির্বিঘœ করাতে সারাদেশে সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান সচল করা হচ্ছে। সারাদেশেই সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। যেভাবে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ইনশাল্লাহ প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। তার আদর্শকে ধারণ করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখছি। বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সড়ক পথের যে উন্নয়ন করেছি তাতে আগামী ঈদে কাউকে কষ্ট ভোগ করতে হবে না। নির্বিঘেœ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। আমরা সারাদেশে সড়ক যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি তা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে।’
এ জন্য জাপান সরকার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ কাজগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু গাড়িচালককে দোষ দেবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। গাড়িচালক ও পথচারী কেউই যদি ট্রাফিক আইন না মানে তাহলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটবে।’
তিনি বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতে চালকের বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। আমরা অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থা এবং খাওয়া-দাওয়াসহ যেকোনো গাড়িচালক যাতে বিশ্রাম নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েদের ধারণা দিতে হবে।’ স্কুলের সামনে যে সব জেব্রা ক্রসিং থাকে সেগুলো সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য তিনি ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের জন্য রাজধানীবাসীকে একটু কষ্ট সহ্য করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। এই কাজের জন্য ঢাকায় মানুষ যানজটে কষ্ট পাচ্ছেন। আমি বলবো আরও ভালোভাবে চলাচলের জন্য এই কষ্টটা একটু সহ্য করতে হবে। একটু কষ্ট সহ্য করলে ভবিষ্যতে যাতায়াত আরও আরামদায়ক হবে। আশা করি এ কাজটা হয়ে গেলে আর কোনও কষ্ট থাকবে না।’
বাংলাদেশ এখনও ডিজেলচালিত ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। এরপর দূরপাল্লায়ও বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মেট্রোরেল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে ১৬টি স্টেশন থাকবে। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য