দ্বিতীয় মেয়াদে দেড় লাখ কোটি ডলারের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয়ের চ্যালেঞ্জের মুখে মোদী
নূর মাজিদ : ভারতে আবারও ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যিনি এবারের নির্বাচনে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয় এবং বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের চ্যালেঞ্জই এবার মোদীর সামনে।
ক্ষমতায় এলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের অবকাঠামো নির্মাণখাতের বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে এবং এর পরিমাণ ১০০ লাখ কোটি ভারতীয় রূপি বা ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার হবে বলেই এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
তবে ভোট পাওয়ার জন্য অঙ্গীকার করা যতটা সহজ, ক্ষমতায় গিয়ে তা কার্যকর করা তত সহজ নয়। তাই নির্বাচনে মোদীর ঐতিহাসিক জয়ে উন্নয়ন নিয়ে যারা আশাবাদী তারা নিরাশও হতে পারেন। বিশেষত, যারা ভারতের অবকাঠামো এবার চীনের মতো উন্নত হয়ে উঠবে বলে ভাবছেন তাদেরও খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার কারণ নেই। আর এ চ্যালেঞ্জটাই এবার মোদীকে নিতে হচ্ছে তার দ্বিতীয় মেয়াদে। সূত্র : ইকোনমিক টাইমস
বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশের প্রতিটি হাইওয়ে দ্বিগুণ চওড়া করার এবং বড় বাণিজ্যিক বিমান বন্দরের সংখ্যা বাড়ানোর। তবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথমেই তাদেরকে রাজনৈতিক বাধা পাড়ি দিতে হবে। কারণ, লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও উচ্চকক্ষে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সেখানে কংগ্রেস নেতৃতা¡ধীন আঞ্চলিক দলগুলোর বিরোধী কোয়ালিশন বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। অর্থাৎ, যেকোন ধরনের বড় যোগাযোগ উন্নয়ন কার্যক্রম পাশ করতে তাদেরকে বিরোধীদের সমর্থন আদায় করতে হবে। উভয়পক্ষের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে যা আরো দুরূহ ব্যাপার।
বিশেষত, অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিকার নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত আরো বাড়বে। ভারতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৩০ কোটি মানুষের বাস। সেখানে কৃষিজমি এবং বাসের জন্য উপযুক্ত ভূমির মালিকানা নিয়ে অতীতেও অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের ঘোর বিজেপি বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিপিএম যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন সিক্সগুর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে। তাই চাইলেই বিপুল পরিমাণ ভূমি অধগ্রহণ বিল পাশ করা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে প্রাদেশিক দলগুলোর সঙ্গেও সমঝোতা করতে হবে বিজেপির এনডিএ জোট সরকারকে। অনেকক্ষেত্রে অধিগ্রহণের মূল্যও বাড়াতে হবে সরকারকে।
চলতি বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক, ভূমি অধিগ্রহণকে ভারতের অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ বলে চিহ্নিত করেছে। কারণ, এর আগেও মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে একটি বড় পরিসরের ভূমি অধিগ্রহণ বিল পাশ হয়নি।
তবে পুরোটাই যে সরকার একা করবে তাও নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিপুল সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপি’র। কিন্তু, নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে নতুন সরকারকে আরো অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মোদী সরকার গতিশীলতা না আনতে পারলে তারাও নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করতে চাইবেন না। এটা মোদীর প্রথম মেয়াদের শাসনেও লক্ষ্য করা গেছে। এসময় বেসরকারি কো¤পানিগুলো কারখানা স্থাপন এবং যন্ত্রপাতি স্থাপনের বার্ষিক ৯ দশমিক ২ শতাংশ হারে খরচ বাড়ায়। যা প্রত্যাশিত বিনিয়োগের চাইতে অনেক কম।
এছাড়াও, তারা বার্ষিক ১ দশমিক ৩ শতাংশ হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এটা এক দশক আগের তুলনায় অনেক কম। সেসময় কো¤পানিগুলোর বার্ষিক বিনিয়োগের হার ছিল ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ আর চাকরি সৃষ্টির হার ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ভারতের অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক একটি সংস্থা ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’ এসব তথ্য জানায়।
সার্বিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন বাণিজ্যে গতিশীলতা আনে এবং নতুন শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রেরণা যোগায়। সেখানে আলোচিত ভূমি অধিগ্রহণ ইস্যু সবচাইতে বড় বাধা। যার সমাধান না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিক থেকে আবারো নেতিবাচক রেকর্ড করার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপি’র।