ড. জাহিদ হোসেন বললেন, শর্তহীনভাবে পুনঃঅর্থায়ন করলে ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না
আমিরুল ইসলাম : সরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকারের কাছে ব্যাংকগুলো চেয়েছে ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে। এ রকম অর্থ বরাদ্দ বা পুনঃঅর্থায়নের পদ্ধতি আর কতো বছর চলতে থাকবে, এ পদ্ধতি বদলানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, শর্তহীনভাবে পুনঃঅর্থায়ন করে গেলে ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিটা অনেক আগেই বদলানো উচিত ছিলো। প্রতিবছরই একই ঘটনা ঘটে। এ বছর এক হাজার পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে গত বছর যেটা ২ হাজার কোটি টাকা ছিলো। ব্যাংকগুলোর যে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয় এটা আংশিকভাবে মেটানো হচ্ছে প্রতিবছরই। কিন্তু কোনো রকম শর্ত ছাড়া দেয়া ঠিক হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর ৯৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বোঝার অধিকাংশ সরকারি ব্যাংকেই হয়েছে। এর একটা সুরাহা করা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে ঘাটতিও থাকবে এবং এ বরাদ্দ দেয়ার সংস্কৃতিও বন্ধ হবে না। পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট যেটা করা হচ্ছে তার আওতায় সরকারি ব্যাংকগুলোও রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীনেই রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোতে যারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তাদের পারফরমেন্স মূল্যায়ন ও তাদের ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির জন্য আগামীতে কি করা হবে, ফলাফল কি আশা করা যেতে পারে তার ভিত্তিতে যদি অর্থায়ন করা হতো, কেমন ফলাফল দেখালে ভর্তুকি দেয়া হবে তাহলে আমরা কিছু পরিবর্তন দেখতে পারতাম। বিনা শর্তে প্রতিবছর সরকর থেকে সহায়তা দেয়া হলে ব্যাংকগুলোর নিজেকে প্রমাণ করার চাপটা কোথা থেকে আসবে?
তিনি আরো বলেন, অর্থ বরাদ্দের আগে শর্ত থাকবে পারফরমেন্স ইনডিকেটরগুলোর উন্নয়ন করার। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কতোটুকু কমাবে? এ রকম একটা ইনডিকেটর ঠিক করে দিতে হবে। এটা হলে অর্থায়ন করা হবে, না হলে করা হবে না। যারা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধি, বিদেশে যাওয়া এরকম পুরস্কার এবং তিরস্কারের ব্যবস্থা করা যাতে কিছু কাজ করা হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানের পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে যেগুলো না করা হলে সরকার অর্থায়ন করবে সেগুলো বলে দিতে হবে। তখন বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। বড় ব্যাংকগুলো তো আর বন্ধ করা যাবে না। কারণ এর মধ্যে কিছু সামাজিক কার্যক্রমও আছে। সেটার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যারা দায়িত্বে আছেন তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হবে না। তারা ধরে নিচ্ছেই লোকসান হলে কোনো ক্ষতি নেই, আগামী বাজেটে তো আবার অর্থায়ন করা হবেই। অর্থায়নটাকে সংস্কারের সঙ্গে লিংক করতে হবে। এখন কি সংস্কার করা সম্ভব, এটা অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্টে বলা থাকে।