ঈদ ঘিরে দাম বাড়লো সেমাই-দুধ-মসলার
রমজান আলী : ঈদের দিন সকালে অতিথিদের মিষ্টি মুখ করাতে সেমাই, চিনি ও দুধ কেনাকাটায় ব্যস্ত এখন নগরবাসী। হাতে সময় কম থাকায় তারা ছুটছেন সেমাই-চিনি কিনতে।
সেজন্য রাজধানীর বাজারগুলো বেড়েছে সেমাই, মসলা, গুঁড়া দুধের দাম। ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে সেমাই, চিনি, দুধের দোকানে ভিড়। তবে স্বস্তির ব্যাপার, অন্য নিত্যপণ্যের দাম আগে থেকে বাড়তি থাকলেও রোজায় বাড়েনি চিনির দাম। গতকাল রাজধানীর চকবাজার, মৌলভীবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর, সেগুনবাগিচা বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে খোলা সেমাই ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত সেমাই। এর মধ্যে রয়েছে বনফুল,অ্যারাবিয়ান, এস টি বেকারি, জেদ্দা, মধুবন, আলাউদ্দিন, কুলসুন, প্রাণ, ফু-ওয়াং, বিডি ফুড, প্রিন্স, কিশোয়ান, ডেনিশ, পুষ্টি ও ডায়মন্ড। এসব লাচ্ছা সেমাইয়ের ২০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। কয়েক দিন আগেও ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া ৫০০ গ্রামের স্পেশাল লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। ঈগলু ব্র্যান্ডের ২৫০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। কিশোয়ন ৫০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই ১২০ টাকা, এস টি বেকারির লাচ্ছা সেমাইয়ের ৫০০ গ্রামের প্যাকেট ৫৫ টাকা, বোম্বের ৮০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খোলা সেমাইয়ের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। শনিবার সাধারণ মানের খোলা সেমাইয়ের দাম ছিল প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা রোজার আগে বিক্রি হতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। কিছুটা ভালো মানের সেমাই বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। তবে এসব সেমাই পাইকারি বাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যেমন জেদ্দা ব্র্যান্ডের খাচি সেমাই এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।
মৌলভীবাজারের ইতি ফুডের মো. সেলিম বলেন, সেমাই তো আর সারাবছর তেমন বিক্রি হয় না। ঈদ এলে চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই দামও একটু বাড়ে। পাইকারিতে এক টাকা বাড়লে খুচরা পর্যায়ে বাড়ে ১০ টাকা। এবছর সেমাইয়ের দাম কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ উৎপাদন কমে গেছে। এবছর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন কমায় দাম বেড়েছে। আমরা এখন ৩৭ দশমিক ৫০ কেজি ওজনের এক খাচি সেমাই বিক্রি করছি ১৫০০ টাকায়। যা প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪০ টাকা ৫৪ পয়সা। যা আগে ছিল ৩৬ টাকা।
চকবাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল হাসান বলেন, আমাদের সেমাই ছাড়া ঈদ হয় না। ছোটবেলা থেকে সেমাই খেয়ে ঈদগাহে যাই। তবে ভেজালের বাজারে এখন সেমাই কিনতে চিন্তা করতে হয়। তাই ভেজাল এড়াতে প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের সেমাইকেই এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
সেমাই রান্নার উপকরণ গুঁড়া দুধের দামও বেড়েছে আরেক দফা। এক কেজি ওজনের ডানো দুধ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকা দরে। যা আগে ছিল ৫৫০ টাকায়। ৫০০ গ্রাস ওজনের মার্কস দুধের দাম ২১০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০ টাকায়, ফ্রেশ দুধের দাম ৫০০ গ্রাম দুধের প্যাকেট ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০, ডিপে�ামা এক কেজির প্যাকেট ৫৫০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকায়।
এদিকে মিল্ক ভিটা, আড়ংসহ বিভিন্ন ধরনের তরল দুধও কোনো কোনো দোকানি মোড়কে উল্লেখিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা তরল দুধের দাম। প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা রোজার আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এই অভিযোগে গত কয়েক দিনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত বেশ কয়েকটি দোকানকে জরিমানাও করেছেন।
কিশোরগঞ্জ স্টোরের খাইরুল ইসলাম বলেন, ঈদ এলে তরল দুধের পাশাপাশি প্যাকটজাত দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চাহিদার তুলনায় ঘটতি থাকায় দাম বাড়ে। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়া দুধের দাম বেশি। ফলে গত এক মাসে সব ধরনের ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে সেমাই রান্নার অন্যতম উপাদান চিনির দাম বাড়েনি। প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা ও খোলা দেশি চিনি প্রতিকেজি ৬০ টাকা। আর আমদানি করা প্রক্রিয়াজাত চিনি প্রতিকেজি ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার রোজায় চিনির দাম বাড়েনি।
চিনির দাম স্বাভাবিক থাকলেও বেড়েছে বিভিন্ন মসলার দাম। এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০০ টাকা। যা রোজার আগে এক কেজি এলাচ ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকা কেজি দরে। দারুচিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। রোজার আগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন দাম বেড়েছে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে জিরা-বাদামসহ অন্যান্য মসলার দাম। সম্পাদনা : ইকবাল খান