মতিনুজ্জামান মিটু : কৃষিমন্ত্রী বরাবরে দেয়া প্রস্তাবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) এর আজীবন সদস্য কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘কোটি কোটি মানুষের খাদ্য ও আত্মকর্মসংস্থানের বিশাল কৃষি খাতকে বাঁচাতে সরকারিভাবে সরাসরি ধান চাল ক্রয় ও কৃষকের ঘরেই সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে’।
তিনি জানান, এক সময়ের ৭ কোটি বাঙালি এখন প্রায় ১৭ কোটি। তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিলো। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হতো। স্বাধীনতার পর প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ হিসেবে ৫০ বছরে এক কোটি একর কৃষি জমি কমে গেছে। তবুও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এমনকি উদ্বৃত্ত। এটা সম্ভব হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন, জোরদার সম্প্রসারণ কার্যক্রম এবং কৃষিজীবীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রম ও বিনিয়োগে। এই কৃষিই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। একটা কৃষি পরিবারের ছেলে-বুড়ো-মহিলা-পুরুষ সবাই কৃষিতে জড়িয়ে থাকেন। ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যপুষ্টি ও কোটি কোটি মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের মতো এতো বিশাল খাত দেশে আর একটিও নেই। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা পৃথিবীর সবদেশেই ঝুঁকিপুর্ণ। অন্যান্য দেশে বীজ বপন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের প্রতিস্তরে কৃষকরা পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পেয়ে থাকেন, এমনকি বীমার ব্যবস্থাও রয়েছে।
কৃষির বিশাল সম্ভাবনা, অনেক সমস্যা ও ভাবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে অনেক কিছু করার রয়েছে মন্তব্য করে এই কৃষিবিদ বর্তমানের ধান/চাল সংগ্রহ ও মূল্য সম্পর্কে কতিপয় সুপারিশ করেন। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে; অবিলম্বে বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ এবং কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে সরাসরি ধান ক্রয় করতে হবে। এজন্য ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড, প্রয়োজনে প্রতি গ্রামে ধান ক্রয় করতে হবে। গুদাম হিসেবে সাবেক ইউনিয়ন বীজ গুদাম (যদি থাকে), সরকারি গুদাম ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি এগুলো না পাওয়া যায় তবে কৃষকের ঘরেই অস্থায়ীভাবে ক্রয় করা ধান সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে কৃষকরা যুগযুগ ধরে নিজের ধান ও বীজ নিজেই সংরক্ষণ করে আসছেন। সরকারি ক্রয় কমিটি ধানের মান ও আর্দ্রতা পরীক্ষা করেই চাষির গোলায় ধান সংরক্ষণ করবে, প্রয়োজনে নতুন অস্থায়ী গুদাম তৈরি করতে হবে। যেখানে সম্ভব, ক্রয় করা ধান ক্রয় কমিটির তত্ত্বাবধানে চাল তৈরি করতে পারবে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ চালকল ছাড়াও অনেক ভ্রাম্যমাণ চালকল রয়েছে। প্রয়োজনে এগুলোর সংখ্যা বাড়াতে হবে। ধান ক্রয়ের সময় ক্রয় করা ধানের ৫০ থেকে ৭০ ভাগ দাম নগদে পরিশোধ করা যেতে পারে এবং সংরক্ষিত ধানের গুণমান পরীক্ষার পর পরিবহনের সময় সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে।