আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
ঈদকে ঘিরে ২ লাখ কোটি টাকার বাজারে চাঙ্গা অর্থনীতি
স্বপ্না চক্রবর্তী : ১ মাস সিয়াম সাধনা শেষে রাত পোহালেই মুসল্লিদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সারা দেশের মানুষ। গ্রাম থেকে নগর প্রতিটি পরিবারেই চলছে ঈদ আয়োজনের তোড়ৃজোড়। নগরীগুলোর ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এতে করে এক দিকে যেমন আনন্দ ছড়িয়েছে জনমনে তেমনি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে অর্থনীতি। ঈদকে সামনে রেখে চাঙ্গা টাকার বাজার। টাকার অঙ্কে এই ঈদে লেনদেন হয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
শুধু নগরী নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয়-জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। এই কেনাকাটায় শুধু বস্ত্র কিংবা জুতা নয়, ভোগ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ভ্রমণ, পবিত্র ওমরা পালন, ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন খাতসহ প্রতিটি সেক্টরে নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে সমাজের বিত্তবানদের যাকাত, ফিতরা দেয়ায় ধনী-গরিব সবার হাতে রয়েছে টাকার প্রবাহ। এছাড়া খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তেমন যোগানও এসেছে বেতন-বোনাস থেকে। ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপক হারে। রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি মাসের ২৫ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। এছাড়া মোবাইলে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাÐ যেমন বাড়বে তেমনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে গোটা অর্থনীতি। ঈদের অর্থনীতি নিয়ে সরকারিভাবে এখনো কোনো গবেষণা না হলেও বেসরকারি গবেষণা অনুসারে ঈদ ও রমজানে অর্থনীতিতে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত লেনদেন হয়। এ টাকার বড় অংশই যায় গ্রামে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর অনুমানের ভিত্তিতে করা এক তথ্যে জানা গেছে, এবার ঈদ-বাণিজ্যে ৬০ শতাংশ পোশাক, ২০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য এবং বাকি ২০ শতাংশ অন্য পণ্য বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ঈদ উৎসব ঘিরে লোকজনের কেনা-কাটা বেড়ে যায়। দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। তাই বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতাও। এতে করে আমাদের আর্থিক সামর্থ্যও প্রমাণিত হচ্ছে বার বার।
তবে নগর অর্থনীতির চাইতে ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ অর্থনীতি বেশি চাঙ্গা থাকে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদ উৎসব ঘিরে বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয়ে ওঠে গ্রামের অর্থনীতি। এ সময় নি¤œ আয়ের মানুষের হাতেও টাকা যায়। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। তবে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এ জন্য ওই টাকা উৎপাদন খাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
খুশি ব্যবসায়ীরা সম্প্রদায়ও। লোকজনের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ায় বেড়েছে পণ্য বিক্রির হার। দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশব্যাপী ২২ লাখ দোকান আছে। তাদের দৈনিক মোট এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। আর ঈদের আগে বিক্রি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। তাতে সাড়া দেশে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দৈনিক বিকিকিনি হয়। এ ছাড়া টেইলারিং এবং অনলাইনেও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ বাজার ঘিরে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন ছাড়িয়ে গেছে। দোকান মালিক সমিতির নেতা মো. হেলাল উদ্দিনের হিসাবে জাকাত ও ফিতরার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা, তৈরি পোশাকের ৩৫ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যের বাজার ২৫ হাজার কোটি এবং ঈদ বোনাস, পরিবহন ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয়। এ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ২৭ হাজার কোটি টাকার কিছু অংশ ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয়ে থাকে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান