কৃষক-পোষ্য মাদ্রাসা : সুদিনে আসে হাত পেতে, দুর্দিনে আসে না হাত দিতে!
মাসুদ রানা
অধিকাংশ মাদ্রাসা গ্রামে। প্রায় সব মাদ্রাসা ছাত্রই গ্রামের। মাদ্রাসাগুলোর আর্থিক আয়ের উৎস গ্রাম। গ্রামের অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি। কৃষির প্রধান উৎপাদন হচ্ছে ধান। এবার যখন কৃষকেরা ধান কাটার লোক নিয়োগ করতে পারছিলেন না। তখন প্রথম কোনো একটি বাম ছাত্র সংগঠন গ্রামে গেলো স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কৃষকদের ধান কেটে সাহায্য করতে। কৃষকদের কাছে বামপন্থী ছাত্রদের এ যাওয়া দেখে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের ছাত্ররাও গেলো তাদের জনসম্পৃক্ততা দেখাতে। শেষ পর্যন্ত এমনকি পুলিশও গেলো তাদের ‘কৃষক-প্রীতি’ দেখাতে। অভিযোগক্রমে তারা পাকা ধান কেটে দিয়ে কৃষকের উপকারের বদলে কাঁচা ধান কেটে ক্ষতিই করলো।
যাক, ঐতিহাসিকভাবে এটিই সত্য যে, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কৃষকদের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আর এর পেছনে যে একাত্মতা ও দরদ আছে, তার কারণেই ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে যুগে যুগে গড়ে উঠেছে গণআন্দোলন, এবং এমনকি মুক্তি সংগ্রামও। কিন্তু গ্রামের কৃষকদের দ্বারা লালিত-পালিত গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্ররা কৃষকদের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না? অতি সাম্প্রতিক দুর্দিনে কি তারা পারতো না কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে সাহায্য করতে? কিন্তু কেন করলো না? ভাবুন!
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে বন্যা হলে আমি একটি জেলাতে গিয়ে ওখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে ত্রাণকাজে গিয়েছি। কিন্তু আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম ওই জেলাতে অগণিত মাদ্রাসা ছাত্র থাকার পরও কৃষকদের বিপদে ওদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি। অথচ নিরূপদ্রব ফসল তোলার মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে অনুদান স্বরূপ ফলস বা অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রামগুলোতে ভিড় করে থাকে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা। তখনই হয় যতো ওয়াজ-মাহফিল। তো এতে আমরা কি দেখি? আমরা দেখি বাংলার কৃষকের সুদিনে মাদ্রাসা আসে হাত পেতে, কিন্তু দুর্দিনে আসে না হাত দিতে! ফেসবুক থেকে