আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
এক মণ ধান বেচে এক কেজি মাংসও কেনা যাচ্ছে না কৃষকের যন্ত্রণাময় জীবনের জ্বালা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ঈদ
মতিনুজ্জামান মিটু : একবার নয়, দুবার নয়, বারবার ধানসহ প্রায় কোনো ফসলেরই উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছে না দেশের কৃষক। এরই মাঝে এসেছে বছরের প্রথম ও প্রধান উৎসবের ঈদ-উল-ফিতর। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে নতুন পোষাকসহ অন্যান্য পণ্য কেনাকাটা এবং তা আপনজনদের দেয়ার চল রয়েছে। বছরের প্রথম আনন্দের দিন হলেও এবারের ঈদেও স্বস্তিতে নেই দেশের অধিকাংশ কৃষক এবং ক্ষুদ্র দোকানি। কৃষকরা সাধারণত ধানসহ বিভিন্ন ফসল বেচে নতুন পোষাকসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনে থাকেন। বর্গাচাষীসহ ক্ষুদ্র কৃষকরা সাধারণত ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকানিদের কাছ থেকে কেনাকাটা করেন। অসম্ভব রকমের দর পতনের কারণে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা ধান বেচতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে এক মণ ধান বেচে একজন কৃষি শ্রমিকের দামও ওঠাতে পারেনি তারা। এর ওপর ধারদেনা মিটিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে এমন কৃষকের সংখ্যাও কম নয়। কৃষকদের অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ক্ষেত্র বিশেষে এই মৌসুমে ৪২ কেজির একমণ ধান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকাও বিক্রি করা যায়নি। অথচ বর্তমানে এক কেজি গরু ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ ও ৭৫০ টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে এবার অধিকাংশ কৃষক ঈদের কেনাকাটা করতে দোকানে যাননি। তাই ক্ষুদ্র দোকানিরাও মন্দা দশায় পড়ে হাতপা গুটিয়ে বসে আছেন। বেচাকেনা নেই বললেই চলে।
কৃষি গবেষণা বোর্ডের সদস্য ও পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল কৃষিজীবী পাবনার নুরুন্নাহার বেগম বলেন, এক মণ ধান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়ও বিক্রি করা যায়নি। পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। চাল কুমড়াসহ কোনো সবজিরই দাম পাওয়া যাচ্ছে না। একটা চাল কুমড়া ৪টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। লিচুরও একই দশা। হাজার প্রতি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭০০, ৮০০, ১২০০ ও ২০০০ টাকায়। এতেও তাই গুনতে হচ্ছে লোকসান। এই পরিস্থিতিতে কৃষক ঈদ করবে কী দিয়ে? তবে কৃষকরা কষ্টে থাকলেও কৃষি শ্রমিকরা ভালো আছেন। তারা দিনে ৬০০ টাকা আয় করে খরচের পর ৩০০ টাকা জমাতে পারছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক যশোরের মো. আব্দুল ওয়াহেদ সরদার বললেন, কৃষকের আবার ঈদ। তাদের শুধু মৃত্যুই বাকি আছে। যন্ত্রণাময় জীবনে এই ঈদ তাদের জীবনের যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু কৃষকই নয়, ক্ষুদ্র দোকানি, শ্রমিক ও সমুদ্রর জেলেরাও এবার ঈদের আনন্দে যোগ দিতে পারছেন না। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরাও কষ্টে আছে। ঈদ যার যার আনন্দ সবার।
এবার কেমন যাবে কৃষকের ঈদ এ প্রশ্নের জবাবে একাদশ জাতীয় সংসদে গঠিত কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ধান বিক্রি ঘিরে যে সমস্যা ছিলো তা অনেকাংশে কেটে গেছে। কৃষকের ঈদ ভালই যাবে। এবারের বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে লাগানো গেলে ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আবদুল মুঈদ বলেন, এবারের ঈদ কেমন যাবে তাতো কৃষকই ভাল বলতে পারবেন। তবে কৃষকের ঘরে ধান আছে। তাই তাদের ঈদ খারাপ যাবে না। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। দেশের মোট কৃষকের ১৪ ভাগ কৃষকের ঈদ হয়তো এবার কিছুটা খারাপ যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে কৃষকের অবস্থার উন্নতি হবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান