ঈদের রাতে ভেঙে ফেলা হলো পুরান ঢাকার ‘জাহাজ বাড়ি’
মৌরী সিদ্দিকা : ঈদের রাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো প্রতœতাত্তি¡ক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবন।
পুলিশ পুরান ঢাকার ‘জাহাজ বাড়ি’ ভাঙা বন্ধের দাবি করলেও কার্যত ঐতিহ্যবাহী ভবনটির বেশিরভাগ অংশই ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিডি নিউজ
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমের লোকজন ঈদের দিন বুধবার রাতে হঠাৎ চকবাজারের এই ভবন ভাঙে বলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান। তবে এ বিষয়ে হাজী সেলিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আফতাব উদ্দিন নামে তাদের একজন এরপর পৃষ্ঠা ৭, সারি
(শেষ পৃষ্ঠার পর) বৃহস্পতিবার বলেন, ‘কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই ভবন ভাঙা শুরু করে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের লোকজন।’
ভবন ভাঙার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয় বলে চকবাজার থানার ওসি শামীম আল রশীদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি যতোটুকু শুনেছি অনেক পুরানো ঐতিহ্যবাহী দোতলা এই ভবনটি হাজী সেলিম কিনে নিয়েছেন।
‘তিনি এটি ভেঙে নতুন কিছু করবেন হয়তো। কিন্তু প্রতœতাত্তি¡ক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
আরবান স্টাডি গ্রæপের ভাষ্য মতে, পুরান ঢাকার চকবাজারের এই ভবনই দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে বিবেচিত হত। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার ইব্রাহীম খান জানান, এই ভবনটি প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে একটা জিডি করা আছে।
ওই এলাকায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ইব্রাহীম একথা বললেও বাস্তবে ভবনটির দুই পাশে যে পরিমাণ ভাঙা হয়েছে, তাতে ভবনটি তার চেহারা হারিয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকার হেরিটেজ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করে আসা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘রাতে সবাই যখন ঈদের আনন্দ করছে তখন প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বুলডোজারের সাহায্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল চকবাজারের জাহাজ বাড়ি।’
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার চকবাজার থানায় একটি জিডি করেছেন বলে জানান তিনি। আরবান স্টাডি গ্রæপের পক্ষ থেকে করা এক রিট আবেদনে হাই কোর্ট ২০১৭ সালে পুরান ঢাকার ২২০০ ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থাপনার ধ্বংস, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ভবনটির দুই পাশেই ভেঙে ফেলা হয়েছে তাইমুর বলেন, ‘হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শতবর্ষী এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি গত মার্চ মাস থেকে ভাঙার চেষ্টা চলছিলো। তখন জিডি করে থানার সাহায্যে বন্ধ করা হয়। এবার এমন একটা সময়ে এমনভাবে করা হলো যেন বাধা দেয়ার কোনো সুযোগ না থাকে।’
তিনি জানান, গত সাত-আট মাসে আরবান স্টাডি গ্রæপের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টায় কিছু ভবন ভাঙার চেষ্টা ঠেকানো গেলেও ইতিমধ্যে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ভবন ভাঙা হয়েছে।
ওই ভবনের বিভিন্ন দোকানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবনটি ওয়াকফ হিসেবে ছিলো। তারা নিয়মিত ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিনিধিকে ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত ওয়াকফের ওই প্রতিনিধি ওমরা করতে সৌদি আরব গেছেন বলে ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন জানান। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তার ছেলের মোবাইলে ফোন করলে তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।