১৩ বছর বয়সে আটক, এখন এ কিশোরের মৃত্যুদÐ চায় সৌদি রাজতন্ত্র!
নিউজ ডেস্ক : সৌদি আরবের প‚র্বাঞ্চলের এক ধুলোমলিন রাস্তায় বাইসাইকেলে জড়ো হয়েছে একদল বালক। সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে প্রায় ৩০ জন বালকের ওই দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১০ বছর বয়সী মুর্তাজা কুরেইরিস। মনে হচ্ছিল কোনো প্রতিযোগিতা করার জন্য জড়ো হয়েছে বালকের দল। কিন্তু না, ওদের উচ্চকিত কণ্ঠে শোনা গেলো মানবাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বিভিন্ন ¯েøাগান। বাংলা নিউজ
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’র উত্তাল সময়ে সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র দাবিতে সেসময় দেশজুড়ে যে গণবিক্ষোভের স‚চনা হয়েছিল, তার অংশ হিসেবেই মুর্তাজা কুরেইরিস তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সাইকেল রাইডে নেমেছিল। এই অল্পবয়সী বালকদের জড়ো হওয়ার বিষয়টি সেসময় ‘পর্যবেক্ষণ’ করে সৌদি সরকার। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিন বছর পর মুর্তাজাকে ১৩ বছর বয়সে গ্রেফতার করে রাজতন্ত্রের বাহিনী। পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনে চলে যাওয়ার সময় সীমান্তে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে মুর্তাজাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। প্রায় চার বছর ‘বিচার-প‚র্ব কারাভোগ’ করানোর পর এখন মুর্তাজাকে (১৮) মৃত্যুদÐে দÐিত করতে চায় সৌদি আরব সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মুর্তাজাকে মৃত্যুদÐে দÐিত করতে সরকারের ‘সর্বাত্মক আয়োজন’ উঠে এসেছে।
সিএনএন বলছে, সৌদি আরবে অপরাধের দায় দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়সসীমার বিষয়টি অস্পষ্ট হলেও সেখানকার রাজতন্ত্র আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংগঠন কমিটি অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ডকে ২০০৬ সালে জানায়, তারা এ বয়সসীমা ১২ বছর মেনে থাকে। এমনকি দায় দেওয়ার বয়সের আগে কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেওয়া হয় না বলেও দাবি করে রাজতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ।
অথচ মুর্তাজার বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে, সে অনুসারে ‘অপরাধ সংঘঠিত করার সময়’ তার বয়স ছিল ১০ বছর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুর্তাজার ভাই আলী কুরেইরিস মোটরসাইকেলেযোগে প‚র্বাঞ্চলীয় শহর আওয়ামিয়াতে গিয়ে থানায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেন, সেসময় তার সঙ্গে ছিল মুর্তাজাও।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুর্তাজার এখন সন্ত্রাস আদালতে বিচার চলছে। মৃত্যুদÐ চেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে মুর্তাজার ১৮ বছর বয়সে পদার্পণের কয়েক মাস আগে। তার বিরুদ্ধে ‘উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত’ থাকার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এমনকি বিক্ষোভের সময় সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পেট্রোল বোমা হামলায় সহযোগিতা, ভাইয়ের জানাজার সময় (বিক্ষোভকালে আলী কুরেইরিস নিহত হন) পদযাত্রা বের করার অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব অভিযোগের ব্যাপারে মুর্তাজার কথিত ‘স্বীকারোক্তি’ হাজির করলেও অধিকারকর্মী ও স্বজনরা বলছেন, হুমকি-ধামকি দিয়ে, নির্যাতন করেই এ জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে সিএনএন যোগাযোগ করলেও সৌদি রাজতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি।
যদিও মুর্তাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো ‘প্রাণহানির দায়’ এনে অভিযোগ জমা দিতে পারেনি, তবু তারা সবচেয়ে নির্মম সাজাই চাইছে এই কিশোরের। মৃত্যুদÐ ঘোষিত হলে মুর্তাজার শিরশ্ছেদ পর্যন্ত করতে পারে রাজতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ কারণে শরিয়া আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজাই হতে পারে মুর্তাজার। রাজতন্ত্রের আইন অনুযায়ী, সৌদি আরবে মৃত্যুদÐ কার্যকর হয়ে থাকে কেবল বাদশাহ সালমান আল সৌদ বা তার অনুমোদিত প্রতিনিধির আদেশক্রমেই।