ভারতের নির্বাচনে প্রধান দলগুলোর ব্যয় ৬০ হাজার কোটি রুপি
সান্দ্রা নন্দিনী : ভারতের সদ্যসমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি রুপি। দিল্লি-ভিত্তিক ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ-সিএমএস সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। মূলত, দলগুলোর প্রচারণা, লজিস্টিকস এবং ভোটারদের মধ্যে নগদ অর্থ বিলি করার কাজে খরচ হয়েছে। বিজনেস টুডে, কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া
সিএমএস’র মাঠপর্যায়ের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি একাই নির্বাচনে মোট খরচের ৪৫-৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। সেখানে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ব্যয় ছিলো মোট খরচের ১৫-২০ শতাংশ। যেখানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি’র ব্যয় ৪০-৪৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও, কংগ্রেস খরচ করেছিলো মোট নির্বাচনী ব্যয়ের ৩০-৩২ শতাংশ।
সিএমএস চেয়ারম্যান এন ভাস্কর রাও বলেন, ‘ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ব্যয়ের ধারা দেখে ধারণা করা যায়, ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই ব্যয় ১ লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে। নির্বাচনের আসল খরচের হিসাব দিতে সব দলই লুকোছাপা করে। তবে আমরা যদি এই বিষয়টিতে যথেষ্ট সচেতন না হই কোনদিনই দুর্নীতি কমাতে পারবো না।’
সিএমসি’র দাবি, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক তহবিলনীতিকে আরও অনেকবেশি উদার করেছে। ২০১৭ সালের নির্বাচনী নীতিমালা অনুসারে, যেকোনও রাজনৈতিক দলের তহবিলে কর্পোরেটগুলো নাম প্রকাশ না করেও ইচ্ছেমত অর্থসহায়তা দিতে পারবে। যেখানে ২০১৭ সালের আগে কোম্পানিগুলো তাদের গড় মুনাফার কেবলমাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ সহায়তা দিতে পারতো। সেসময় তাদেরকে সেই অর্থের পরিমাণ এবং কোন দলকে দেওয়া হয়েছে সে নাম অবশ্যই প্রকাশ করতে হতো।
পরবর্তীতে, ২০১৮ সালে নির্বাচনী আইনের সংশোধনীতে ‘ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট’ আনা হয় যেখানে, রাজনৈতিক দলগুলোকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্থসহায়তা পাওয়ারও বৈধতা দেওয়া হয়। এত সহজে অর্থ পাওয়া যাওয়ায় এবারের নির্বাচনে প্রতি আসনে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ১শ’ কোটি রুপি। যেখানে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য ৫০-৭০ লাখ রুপি ব্যয়সীমা নির্ধারিত ছিলো।
এদিকে, ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বিভাগের এক প্রতিবেদনে ভারতের নির্বাচনী প্রচারণাবাবদ ফেসবুক ও গুগল-সহ যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ফেব্রæয়ারি ও মে মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র প্রচারণাতেই ৫৩ কোটি রুপি ব্যয় করেছে। ওই সময়ে ফেসবুকে ১ লাখ ২১ হাজার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বাবদ মোট সাড়ে ২৬ কোটি রুপি ব্যয় হয়েছে। একইসাথে, গুগল ও ইউটিউবে ১৪ হাজার ৮৩৭টি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যয় হয় ২৭ কোটি ৩৬ লাখ কোটি।
এরমধ্যে, বিজেপি ফেসবুকে ২ হাজার ৫শ’ বিজ্ঞাপনের জন্য খরচ করেছে ৪ কোটি ২৩ লাখ রুপি। একইসাথে, অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে ‘মাই ফার্স্ট ভোট ফর মোদী’, ‘ভারতকে মানকি বাত’ ও ‘নেশন উইথ নমো’ বিজ্ঞাপন বাবদ দলটির ব্যয় ৪ কোটি রুপিরও বেশি। গুগল প্লাটফর্মগুলোতে বিজ্ঞাপন দিতে দলটি খরচ করেছে ১৭ কোটিরও বেশি রুপি।
অন্যদিকে, ফেসবুকে ৩ হাজার ৬৮৬টি বিজ্ঞাপনে কংগ্রেসের ব্যয় ১ কোটি ৪৬ লাখ রুপি। পাশাপাশি, গুগলের অন্যান্য প্লাটফর্মে ৪২৫টি বিজ্ঞাপনে ২ কোটি ৭১ লাখ রুপি। আবার, ফেসবুকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজ্ঞাপনীব্যয় ছিলো ২৯ লাখ ২৮ হাজার রুপি। সম্পাদনা : ইকবাল খান