আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
বাংলাদেশে পর্যটনের পুনর্জাগরণ দেখছে দ্য ইকোনমিস্ট
জাবের হোসেন : তানভির আরেফিন লিংকন যখন পাহাড়ঘেঁষা চা-রাজ্য শ্রীমঙ্গলের বনে শান্তি বাড়ি ইকোরিসোর্ট গড়ে তোলেন, তখন সেখানে আসা অতিথিদের বেশিরভাগই ছিলেন বিদেশি। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সেখানে ছিলো অপ্রতুল। ফলে স্থানীয়রা এতে আগ্রহী ছিলেন না। তারা বলতেন, টিভি কোথায়? এসি কোথায়? কেন আমরা শুধু শুধু টাকা ঢালবো? লিংকন জবাবে বলতেন, ঝোনাকি পোকা, খোলা আকাশের নিচে বসে চাঁদ-তারা দেখার জন্য টাকা খরচ করবেন। এটা ছিলো ৫ বছর আগের ঘটনা। আর এখন শান্তি বাড়ির বেশিরভাগ পর্যটকই বাংলাদেশি। ডোমেস্টিক ট্রাভেলার্স হ্যাভ রিভাইভড বাংলাদেশি ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি শীর্ষক এক প্রতিবেদনের ভূমিকায় এমনটা লিখেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট।
এতে বলা হয়, ২০০০ সালে মাত্র ৩ লাখ বাংলাদেশি নিজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে বেরিয়েছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছে গেছে। গত বছরও এই বছর এই সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০ হাজার
কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : ঈদকে কেন্দ্র করে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো অনুমান নির্ভর একটি ধারণা দিয়ে থাকেন। ঈদের সময় ছাড়া ঢাকায় যে পণ্য বিক্রিও হয় তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হয় বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা। বিশেষ করে পাঞ্জাবীর বেলা বলা যায়, ঈদে প্রায় ২০ কোটি টাকার পাঞ্জাবি তৈরী হয়। পরে তা বছর জুড়েই বিক্রি হয়। ঢাকার কয়েকটি ভ্যাট বিভাগের হিসাব থেকে জানা যায়, তারা সমস্ত ঢাকায় ঈদের সময় ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করেছেন।এই হিসাবে পণ্য বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার। এখানেও প্রকৃত হিসাবের সমস্যা রয়েছে। কারণ সব পণ্যে ভ্যাট নেই। সব পণ্যে ব্যাটের হারও এক নয়। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রি হয়েছে। অনলাইনে বিক্রি হয়েছে ১০ কোটি টাকার পণ্য। বছরে অনলাইনে বিক্রি হয় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য। দেশে ১ হাজার ওয়েবসাইট ভিত্তিক পণ্য বিক্রয়ের অনলাইন রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক দোকান রয়েছে ১০ হাজার।
বাংলাদেশে যে কয়টি বড় পোশাকের মার্কেটের আছে তার মধ্যে অন্যতম নিউ মার্কেট। নিম্ন, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পছন্দের পোশাক কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এই মার্কেটে। মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, ওয়ান-পিস, থান কাপড়সহ সকল ধরনের ব্যবহার্য পণ্য আছে এখানে। ছেলেদের জন্যও লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, জামা, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ সব পণ্য আছে।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মতে, এবার ঈদ কেন্দ্রিক মার্কেটিতে হাজার কোটি টাকার ওপরে পোশাক বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাসা-বাড়ির ব্যবহারের পণ্যের বিক্রির পরিমাণও বেশ ভালো। তবে ছেলেদের পোশাকের তুলনায় বরাবরের মতো মেয়েদের পোশাকের বিক্রির পরিমাণই বেশি। ভ্যাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশি ব্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে আড়ংয়ের পণ্য। এরপরে রয়েছে দেশী দশের দোকানগুলো।ভূবন বিশ্বাস। তার ভাষায়, ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে।
সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। এজন্য দায়ী রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ, বিশেষ করে ২০১৬ সালে রাজধানী ঢাকায় সংঘটিত সেই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তো আছেই। কিন্তু বিদেশিরা ভয়ে না আসলেও, তাদের জায়গা নিয়েছেন স্থানীয় ভ্রমণপিয়াসুরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, গত ১০ বছর আয় বেড়েছে ৩-৪ গুণ। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে পরিবারগুলো কিছু টাকা জমাতে পারলে ঘরের আসবাবপত্রের পেছনে ব্যয় করতো। কিন্তু আয় যেহেতু বেড়েই চলেছে, তারা এখন ছুটিতে বের হচ্ছে, বিভিন্ন সেবাখাতে অর্থ ব্যয় করছে।
শান্তি বাড়ি যাওয়ার পথেই আছে গ্রান্ড সুলতান ও প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট। মার্বেল মোড়ানো ভবন এসব রিসোর্টে। আছে সুইমিং পুল, পে�স্টেশনসহ গেম রুম।
এমন ব্যয়বহুল হোটেল অন্যত্রও গড়ে উঠছে। বিশেষ করে ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে। কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। তবে শান্তি বাড়ির সাফল্য দেখে বোঝা যায়, পরিবেশবান্ধব ও অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন নিয়েও আগ্রহ বাড়ছে। ঢাকার বাইরেও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে খেলাধুলার সুযোগসুবিধা সমেত নানা রিসোর্ট।
প্রথমে স্থানীয়রা আসে, এরপর বিদেশিরাও আসবে। এভাবেই চিন্তা করছে সরকার। কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ভূবন বিশ্বাস বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো বিদেশিরা যাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তা নিশ্চিত করা। এসব জায়গায় তারা নিজেদের ইচ্ছামতো আচরণ করতে পারবেন, যেটা হয়তো অন্যত্র করলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের দেয়ার আছে অনেক কিছু। তবে বাংলাদেশিরা সম্ভবত এখনও বিকিনি দেখার জন্য প্রস্তুত নয়। সম্পাদনা : কায়কোবাদ মিলন, রেজাউল আহসান