শিল্পখাতে আবারও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে বাজেটে
সোহেল রহমান : দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে নতুন করে ‘কালো’ টাকা ‘সাদা’ করার বিধান যুক্ত হচ্ছে। শুধুমাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শিল্পখাতে ওই অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে এবং বিনিয়োগকৃত এ অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। নীতি নির্ধারণী এ সিদ্ধান্তটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহলের বিতর্কের কারণে বর্তমান সরকারের আমলে গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার স্থায়ী বিধান তৈরি করা হয়েছে। এরপর থেকে বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো খাতে কালো টাকা সাদা করার জন্য বিশেষ কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে আয়কর আইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা ও কর দিয়ে পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (ই) ধারা অনুযায়ী, অতীতের যে কোনো বছরের আয় গোপন করা হয়ে থাকলে তা প্রদর্শন করা যাবে। যে বছরে ওই আয় করা হয়েছিলো, সেই বছরের বিদ্যমান আয়ের করহার প্রযোজ্য হবে। এর সঙ্গে যোগ করা হবে প্রদত্ত করের ওপর ১০ শতাংশ হারে জরিমানা। সংযোজিত নতুন ধারায় পুরোনো একাধিক বছরের কালোটাকা সাদা করারও সুযোগ রয়েছে। এজন্য বার্ষিক আয়কর বিবরণীর সঙ্গে পৃথক ফরমে নাম, কোন্ খাতের আয় ও পরিমাণ এবং কর ও জরিমানার পরিমাণ ঘোষণা করতে হবে।
তবে তিনটি ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পাওয়া যাবে না। প্রথমত কোনো করদাতার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট করবর্ষের আয় গোপনের অভিযোগে নোটিশ করা হলে বা পুনঃমামলা উন্মোচন করা হলে; দ্বিতীয়ত কোনো করদাতার ব্যাংক হিসাব তল্লাশির জন্য চিঠি দেয়া হলে এবং তৃতীয়ত করদাতার নামে আয় গোপনের অভিযোগে কোনো মামলা চলমান থাকলে।
এদিকে অতীতে বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলেও এতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে শিল্পখাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন মহলের সমালোচনার প্রেক্ষিতে দুই বছর পর এটি বাতিল করা হয়। পরবর্র্তীতে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো।
দেশে কালো টাকার পরিমাণ কতোÑএর কোনো সঠিক ও হাল নাগাদ পরিসংখ্যান নেই। বেসরকারি মতে, দেশে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপি’র ৩৭ শতাংশ। প্রতিবছর দেশের অর্থনীতিতে ৭০ হাজার কোটি কালো টাকা যুক্ত হচ্ছে। তবে কালো টাকার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলেই কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। যদিও এ প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সাড়া মেলেনি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান
অর্থ বিভাগের এক সূত্রমতে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গত ৪৪ বছরে ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি ‘কালো’ টাকা সাদা করা হয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ১৯৮১-৯০ সাল পর্যন্ত ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ, ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা, ২০১৩-১৬ সাল পর্যন্ত ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে।