বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ও চাপের মুখে, বললেন ড. দেবপ্রিয়
সোহেল রহমান : সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এখন একটি সীমান্ত রেখায় দাঁড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেটা অসাম্যজনক বা বৈষম্যমূলক হয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ও চাপের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতিও রয়েছে চাপের মুখে। যা গত দশ বছরে দেখা যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং ব্যাংক সুদের হার ও টাকার বিনিময় হার নমনীয় করা প্রয়োজন।
ব্যাংক খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে এর সবগুলোই আরো বেশি ক্ষতিকর হয়েছে। ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার সমাধান হবে না। এর কাঠামোগত সুশাসন যদি আনা না যায় এবং যারা ব্যাংকের টাকা তসরুপ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
তিনি বলেন, সুদের হারকে নাড়াচাড়া করে যে কিছু করা যাবে নাÑএর প্রমাণ হলো, সুদের হার কমে গেলেও ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না। অন্যদিকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকে কেউ টাকা রাখছে না এবং যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তারাও টাকা দিচ্ছে না। ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, খেলাপি ঋণ ১ টাকাও বাড়বে না। অথচ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো হলেও উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য চাপের মুখে রয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত নেমে আসছে। এটা কিছুদিন আগে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকলেও এখন তা পাঁচ মাসে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে টাকার মূল্যমান পুনঃনির্ধারণ (অবমূল্যায়ন) করা জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছেড়ে টাকার বিনিময় হার ধরে রেখেছে। কিন্তু সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে টাকার ৩ শতাংশ অবনমন করা উচিত। ইতিমধ্যে ভারত ও চীন তাদের মুদ্রার মান পুনঃনির্ধারণ করেছে। এদিকে বর্তমানে আমাদের মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় টাকার অবনমন করা হলে মানুষের পক্ষ তা সহ্য করাও সহজ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেটে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ দেয়া হলে সেটা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান