ক্রয়ক্ষমতা কম বলে ফল খেতে পারেন না দেশের বেশিরভাগ মানুষ
মতিনুজ্জামান মিটু : প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও ফল খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পুষ্টিবিদদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে দেশের অভাবি মানুষ অনেক সময়, প্রতি পাঁচদিনে একদিনও ফল খাওয়ার সুযোগ পান না বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা করা হয়েছে। ফল কম খাওয়ায় বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। অন্যদিকে প্রকৃত দামে বাজারে বিক্রি করতে না পেরে প্রায় প্রতিবছরই মধু মাসে লোকসান গুণতে বাধ্য হচ্ছেন ফল চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্টের উপ প্রকল্প পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের বরাতে কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, সুস্থ্য থাকতে হলে রোজ প্রত্যেককে অন্তত একটি ফল খেতে হবে। সেটা কলা হোক আর আম হোক। দেহকে সুস্থ রাখার জন্য যেসব অণুখাদ্য উপাদান বিশেষ করে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের দরকার হয় তার একমাত্র প্রাকৃতিক উৎস হলো ফল অথবা শাকসবজি। একেক ফলে রয়েছে একেক উপাদান। সেজন্য বিদেশিরা কখন একটি মাত্র ফল খায় না, একাধিক ফল টুকরো করে কেটে একবারে মিশিয়ে খায়। হিন্দুধর্মে দেব-দেবীর পূজার অর্ঘ্য হিসেবে পঞ্চ ফল নিবেদন করেন। এর অর্থ দেব-দেবীরাও পাঁচ রকম ফল পেলে তুষ্ট থাকেন। একেক দেবতার আবার একেক ফলে বিশেষ তুষ্টি আসে। যেমন বেল ছাড়া শিব পূজা চলে না, মঙ্গল ঘটে ডাব ছাড়া কোনো পূজাই হয় না।
ডাব তথা নারিকেল হলো জীবন রক্ষাকারী ফল। কেননা, ডাবের পানিতে যথেষ্ট সোডিয়াম রয়েছে যা আমাদের সংবেদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেহে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ঘাটতি হলেই সাড়া ঠিকমতো মস্তিষ্কে পৌঁছায় না, আমরা কোনো কিছুতে ঠিকমতো সাড়া দিতে পারি না, ভুলে যাই, অবসতা চলে আসে, এমনকি মানুষ কোমায় পর্যন্ত চলে যায়। যেটাকে অনেক সময় স্ট্রোক বলে ভুল করা হয়।
দেহ সুস্থ-সবল রাখতে যেসব পুষ্টি উপাদানের দরকার তার প্রায় সবই ফলে আছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের আধার হলো ফল। ফল পটাশিয়ামের একটি উত্তম উৎস যা সচরাচর অন্য খাদ্যে কম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম কিডনিতে পাথর হওয়া ও হাড় ক্ষয় কমায়। ফলের ফলিক এসিড রক্তকণা গঠনে সাহায্য করে। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ফল অদ্বিতীয়। তাদের দেহের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ফলেট বা ফলিক এসিড দরকার হয়। প্রতিদিন ফল খেলে স্ট্রোক হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কিছু কিছু ফল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কাজেই দেহকে সচল ও সবল রাখতে হলে প্রতিদিন ফল খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান