ড. আতিউর রহমান বললেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচনী ইশতেহারের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে
আমিরুল ইসলাম : ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত হয়েছে। কেমন হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট? বাজেটটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা এবং কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহারে যে লক্ষ্যগুলো ঠিক করা হয়েছিলো সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে এ বাজেটে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট দূরদর্শী। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নটা আসলে চ্যালেঞ্জিং হবে। বাজেটে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। আমাদের যে সংশোধিত বাজেট করা হয়েছে, এ বছর তার চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আয়কর বা ভ্যাট দিয়ে এতো বেশি রাজস্ব আহরণ ঠিক হবে না। তিন লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় ধরা হলে ভালো হতো। আমার মনে হয় এখানে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। প্রতিবছরই বাজেটে রাজস্ব আয় বেশি ধরা হয়, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। চলতি অর্থবছরেও সংশোধিত বাজেটে এটা কমাতে হয়েছে। নতুন বাজেটেও কমাতে হবে। তিনি আরো বলেন, এ বাজেটে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানো হবে। এতে করে মধ্যবিত্ত্বের উপর চাপ আরো বাড়বে। নি¤œমধ্যবিত্তরা যে করটা দেয় সেখানে আরো ছাড় দেয়া দরকার। করের নি¤œসীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে তিন লাখ করা হলে মধ্যবিত্তের উপর চাপ কিছুটা কমতো। এতে করে সরকারের ৭০-৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হতো, কিন্তু একটা জনপ্রিয় বাজেট হতো। বাজেটের যে ব্যায় প্রস্তাবনা রয়েছে, এগুলো নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন তরুণদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। এই বাজেটে সরকার তরুণদের উপর নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। তরুণদের উদ্ভাবন কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এটা একটা ভালো বরাদ্দ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এমপিওভুক্তি বাড়ানো হবে, এর ফলে অনেক ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। এটা আরো বাড়ানো দরকার। কৃষি খাতে ভর্তুকিটা সারে দেয়া হয়, এটা ফসলের দামে দেয়া যায় কিনা তার চেষ্টা করতে হবে। ধান সংগ্রহ করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটা করে খাদ্যগুদাম করার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের ধান সংগ্রহ করে, শুকিয়ে তারপর বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে খুব ভালো হতো। কৃষি রপ্তানি খাতে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, আশা করি আধুনিক কৃষকেরা সেটা কাজে লাগাবে। কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য একটা প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব বাজেটে থাকলে খুব ভালো হতো। তাহলে উৎপাদনের ছয় মাস পূর্বেই জানা যেতো কৃষকেরা তার উৎপাদিত পণ্য কতো দামে বিক্রি করবে। অতিদরিদ্র মানুষের জন্য পেনশন স্কিম চালু করার কথা ভাবছে সরকার। এটা বাজেটে একলাইন লেখেই শেষ করে দিয়েছে। আসলে কীভাবে করা হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতের মধ্যে রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শ্রমিকদের জন্য একটা ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। শ্রমিকদের যে পরিমাণ চাল বাজার থেকে ক্রয় করতে হয় সে পরিমাণ চালের দাম যদি মাসিক ভাতা হিসেবে দেয়া যেতো তাহলে খুব ভালো হতো। অথবা বাজার থেকে তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় করতে পারবে, এ রকম ব্যবস্থা করলেও খুব ভালো হতো। তাহলে তাদের মজুরি পুষিয়ে দেয়া যেতো। আরেকটা ভালো উদ্যোগ হয়েছে সেটা হচ্ছে বাজেটে রেমিটেন্সের জন্য দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে খুব সমস্যা হবে। দেখতে হবে হুন্ডিওয়ালারা যেন এটাতে সসম্যা সৃষ্টি না করে । পেমেন্ট সিস্টেমে করা হলে ভালো হতো। বিদেশে থেকে মোবাইল একাউন্টে টাকা পাঠানোর খরচটা সরকার বহন করলে মনিটরিং করতে সুবিধা হতো। ব্যাংক থেকে শুধু জেনে নিলেই হতো কতো টাকা পাঠানো হয়েছে।